আজ কোর্টে তোলা হবে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমকে
অকল্পনীয় এক নাটকের অবসান হয়েছে বুধবার রাতেই। আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় বুধবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পালানিয়াপ্পন চিদম্বরমকে। তাঁর গ্রেফতারির আশঙ্কা ছিলই। সেই মতো বুধবার রাতে চিদম্বরম প্রকাশ্যে আসার পরে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যান সিবিআই ও ইডি অফিসাররা। দরজা না খোলায় দেওয়াল টপকে বাড়িতে ঢোকেন তাঁরা। এর পরেও নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত রাতেই পি চিদম্বরমকে গ্রেফতার করে সিবিআই। রাতভর লক আপেই থাকতে হয়েছে তাঁকে। সেখানেই সারারাত তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সিবিআই হেডকোয়ার্টারে এনে তাঁর মেডিক্যাল চেক আপ করা হয়েছে।আজ বৃহস্পতিবার তাঁকে কোর্টে তুলবে সিবিআই।
পি চিদম্বরমের গ্রেফতারির প্রেক্ষিতে তাঁর ছেলে কার্তি চিদম্বরমের প্রতিক্রিয়া, ‘৩৭০ অনুচ্ছেদ ইস্যু থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই গ্রেফতার করা হয়েছে পি চিদম্বরমকে।’ বৃহস্পতিবার সকালে চেন্নাই বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চিদম্বরম পুত্র কার্তি বলেছেন, ‘সমস্ত কিছুই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।….আমাকেও ১০ বার সমন পাঠানো হয়েছিল। প্রতিবারই ১০-১২ ঘন্টার জন্য হাজিরা দিয়েছিলাম। ১১ দিনের জন্য আমিও সিবিআই-এর অতিথি ছিলাম। এটি কোনও মামলাই নয়। আইএনএক্স মিডিয়ার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই নেই।’ এরপরই বাবার গ্রেফতারি প্রসঙ্গে কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদম্বরম বলেছেন, ‘৩৭০ অনুচ্ছেদ ইস্যু থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই এই গ্রেফতারি।’ পি চিদম্বরমকে গ্রেফতারির তীব্র নিন্দা করে কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশিদ বলেছেন, ‘যা কিছু হল, তা খুবই বেদনাদায়ক| শুক্রবার বিষয়টি (জামিন-আর্জির শুনানি) তালিকাভুক্ত করা হয়েছে| সুপ্রিম কোর্ট কী নির্দেশ দেয়, তা দেখার জন্য শুক্রবার পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করতেই পারতেন|’
আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় পি চিদম্বরমের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল বলেছেন, ‘আইনজীবী হিসাবে আমাদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় এটি| নাগরিক হিসেবেও উদ্বিগ্ন আমরা|’ প্রসঙ্গত, আবেদনে ত্রুটি থাকার কারণে পি চিদম্বরমের আর্জি শোনেনি সুপ্রিম কোর্ট| শুক্রবারের আগে শুনানি সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত| তার আগেই গ্রেফতার করা হয়েছে পি চিদম্বরমকে|
উল্লেখ্য, ইউপিএ জমানায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকার সময় আইএনএক্স মিডিয়ায় ৩০৫ কোটির বিদেশি অনুদানের অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই সময় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রকের অধীন ফরেন ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন বোর্ডের (এফআইপিবি) অনুমোদন নিতে হত। অভিযোগ, এই সেই সময় আইএনএক্স মিডিয়ায় ৩০৫ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগে বেআইনি ভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ ওঠার পরই তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় আর্থিক দুর্নীতির তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। প্রাথমিক তদন্তের পর ইডি দাবি করে, ওই ৩০৫ কোটি টাকা যে সংস্থায় ট্রান্সফার হয়েছিল, সেটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন চিদম্বরমের ছেলে কার্তি চিদম্বরম। ইডির আরও দাবি, কার্তির হস্তক্ষেপেই এফআইপিবি এই বিদেশি বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল। আইএনএক্স মিডিয়া ছাড়াও এয়ারসেল-ম্যাক্সিস চুক্তিতেও অসঙ্গতির অভিযোগ রয়েছে চিদম্বরম এবং তাঁর ছেলে কার্তির বিরুদ্ধে। এই সংস্থাতেও ৩৫০০ কোটির বিনিয়োগে এফআইপিবির অনুমোদনে অসঙ্গতির অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত চলছে সেই অভিযোগেরও।