ব্যাঙ্ক নিয়ে শঙ্কিত মুখ্যমন্ত্রীর চিঠি প্রধানমন্ত্রীকে

2 - মিনিট |

এসবিআইয়ের কর্মীসংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ হাজার। এই ব্যাঙ্কের ‘মার্জার’-এর জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য হন

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

পশ্চিমবঙ্গ থেকে ব্যাঙ্কের কর্তৃত্ব চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে শঙ্কিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তিনি এই শঙ্কার কথা জানিয়ে চিঠি দিলেন। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। 

শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় এই চিঠির কথা জানান। পরে তাঁর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সাংবাদিক সম্মেলনে চার পৃষ্ঠার এই চিঠির সবিস্তার ব্যাখ্যা করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্ককে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে চারটি ব্যাঙ্কের সঙ্গে। এর মধ্যে আছে এমন দুটি ব্যাঙ্ক, যেগুলোর এ রাজ্যে সদর দফতর। এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের যাত্রা শুরু ১৮৬৫-তে। পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত হয় জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হিসাবে। এটির সদর দফতর কলকাতায়। এটি যে ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার সদর দফতর চেন্নাইয়ে। অপরটি হল ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এটির শুরু ১৯১৪-তে। এই ব্যাঙ্ক স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটি (এসএলবিসি) হিসাবে রাজ্যের নানা ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ক্ষুদ্র শিল্প, স্বনিযুক্তি প্রকল্প, কারিগরদের কার্ড, ঋণ কার্ড প্রভৃতির ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এবং ব্যাঙ্ক-প্রতিনিধিদের নিয়ে সাব কমিটি আছে। এবং সুষ্ঠু সমন্বয়ের ফলে এই রাজ্য এ দিক থেকে দেশের শীর্ষ স্থানে আছে। কেন্দ্রের হিসাবেই দেখা গিয়েছে এই সাফল্য। ২০১৭-‘১৮ সালে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যেখানে ৩৮ হাজার কোটি টাকা, সেখানে পরিমাণটি দাঁড়ায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এর পরের বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার কোটি টাকা। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৭০ হাজার কোটি টাকা। 

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্য সরকার এবং ওই দুই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষর সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। এই সিদ্ধান্ত রূপায়িত হলে রাজ্যের অর্থনৈতিক কাজকর্ম এবং প্রবৃদ্ধি মার খাবে বলে আশঙ্কার যথেষ্ঠ কারণ আছে। কারণ, ইউবিআই এ রাজ্যের ১১টি জেলায় লিড ব্যাঙ্কের কাজ করে। প্রান্তিক মানুষরা ধার পান।পশ্চিমবঙ্গে ইউবিআই এবং এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের শাখার সংখ্যা যথাক্রমে ৮৭৫ এবং ৫৬২। এই সব শাখার বেশ ক’টি বন্ধ হয়ে যাবে এবং কর্মীসঙ্কোচন হওয়ার আশঙ্কা আছে। 


মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, সরকারের সামাজিক খাতে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ এখন আর নগদ অথবা চেকে দেওয়া হয় না। ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার হয়। এ রাজ্যের যে সব পঞ্চায়েতে এখনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই এসএলবিসি-র মাধ্যমে সেই সব পঞ্চায়েতে  ব্যাঙ্কের শাখা খোলার চেষ্টা করছি। সেই কাজটা আটকে যাবে। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে সেটির সহায়ক ব্যাঙ্কগুলো মিশে যাওয়ার পর গোটা দেশে ওই ব্যাঙ্কের প্রায় দেড় হাজার শাখা বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে আছে এ রাজ্যের ৮০টি শাখা। ব্যাঙ্ক অফ বরোদার ‘মার্জার’-এর জন্য কমেছে আরও অন্তত ৩০টি ব্যাঙ্কের শাখা। 


মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এসবিআইয়ের কর্মীসংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ হাজার। এই ব্যাঙ্কের ‘মার্জার’-এর জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী স্বেচ্ছাবসর নিতে বাধ্য হন। এই পরিস্থিতিতে অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশন তাঁকে চিঠিতে কর্মীদের অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন। কলকাতায় অপর যে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের সদর দফতর, সেই ইউকো ব্যাঙ্ককে আঞ্চলিক ব্যাঙ্ক করে দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও প্রতিবাদ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এর নেপথ্যের কারণ জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন, ‘ক্রেডিট সুইস’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে ব্যাঙ্কের এই সংযুক্তিকরণের ফলে ঋণ-পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। স্টেট ব্যাঙ্কের ‘মার্জার’-এর জন্য একদিকে অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ বেড়েছে, লাভও কমে গিয়েছে। বেড়েছে ক্রেডিট লোন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news