তিন নম্বর জোনের মধ্যে পড়েও কলকাতায় ভূমিকম্পের প্রাবল্য ততটা বেশি না হওয়ার কারণ কলকাতার ভূমি ত্বকের নীচে রয়েছে পলিমাটির পুরু স্তর, এর নীচে আবার রয়েছে ১৮-২০মিটার পর্যন্ত বালির স্তর, যাকে বলা যেতে পারে কলকাতার লাইফ-লাইন
রবিবার গভীর রাতে পুরুলিয়া তখন গভীর ঘুমে, রাত ৩টে নাগাদ হঠাৎ করেই তীব্র কম্পন। নড়ে ওঠে খাট-টেবিল-নানান আসবাবপত্র। শব্দ আর কম্পনের জেরে আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়ায়, পুরুলিয়া শহরের মানুষ প্রাথমিক ভাবে বুঝে উঠতে পারেননি বিষয়টি। তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মধ্যে। একটু ধাতস্থ হলে তাঁরা বুঝতে পারেন যে, ভূমিকম্পের ফলেই এই কম্পন। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বেজে ওঠে মঙ্গল শঙ্খ।
জানা গিয়েছে, রিখটার স্কেলে কম্পনের ভূমিকম্পের মাত্রা ৪.১ এর কাছাকাছি। যদিও এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির বা হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, কম্পনের পরেই পুরুলিয়ার মানুষ সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন আপডেট দিতে থাকে। সেই সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছ, এতটাই কম্পন সেখানে অনুভূত হয়েছে যে ঘুম থেকে উঠে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি শুরু করে দেন অনেকে। শুধু তাই নয়, আফটার শকের আশঙ্কায় গোটা রাত অনেকেই বাড়ির বাইরে নিরাপদ আশ্রয়ে কাটিয়েছেন বলেও জানা যাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত কম্পনের উৎসস্থল জানা যায়নি। পুরুলিয়ার পাশাপাশি বাঁকুড়া ও ঝাড়খণ্ডর কিছু অংশেও প্রবল কম্পন অনুভূত হয়েছে। ঠাত ভূমিকম্পে গোটা পুরুলিয়া শহর জুড়ে তীব্র আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
ভূমিকম্পের রেশ কাটতে না কাটতেই এদিন সকাল থেকেই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর সহ পশ্চিমের জেলাগুলিতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রসঙ্গত, রবিবার একদিকে ২৪ পরগনা যখন বৃষ্টি ভিজেছে, তখনই আবার মেদিনীপুরেও প্রবল বৃষ্টির দাপট দেখা গিয়েছে। দুপুর থেকে বৃষ্টি নামে পশ্চিমের জেলাগুলিতেও।
তবে পুরুলিয়ার এই ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, ঝড়-বৃষ্টি, সুনামি, মহাজাগতিক ঘটনার আগাম বার্তা জানানো গেলেও ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা জারির কোন প্রযুক্তি নেই। কবে হবে, কোথায় হবে, মত দিতে পারছেন না ভূবিজ্ঞানীরা। তবে কোনও দেশের কোন কোন এলাকা ভূকম্পপ্রবণ তার মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়। ভূকম্পনের প্রবণতাকে ধরে ভারতকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করেছেন ভূবিজ্ঞানীরা। সবচেয়ে বিপজ্জনক পাঁচ নম্বর জোনে রয়েছে কাশ্মীর, পাঞ্জাব, গুজরাটের কচ্ছ ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো। অপেক্ষাকৃত কমজোরী চার নম্বর জোনের মধ্যে পড়ছে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জেলা।
তিন নম্বর জোনের মধ্যে পড়েও ভূতাত্ত্বিক বিশেষ গঠনের জন্য কলকাতায় ভূমিকম্পের প্রাবল্য ততটা বেশি হয় না। কারণ কলকাতার ভূমি ত্বকের নীচে রয়েছে পলিমাটির পুরু স্তর (সেডিমেন্টারি লেয়ার)। এই স্তরকে পার করলে আবারও ১৮-২০মিটার পর্যন্ত রয়েছে বালির স্তর। এটাই কলকাতার লাইফ-লাইন।
ভূগর্ভের ঠিক দুই ভূস্থানিক প্লেটের সংঘর্ষ বা বিচ্যুতিতে ভূমিকম্প হয়ে থাকে। তবে ঠিক কোনখানে কখন এই সংঘর্ষ হবে, সেই বিষয়টি এখনও অধরা থেকে গিয়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে। তবে ইন্ডিয়ান মেটারোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি), জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জিএসআই),ন্যাশানাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমিকম্প ঘটার পরেই তা যন্ত্র দিয়ে মাত্রা মাপতে পারে। একই অবস্থা অন্য দেশের পরিবেশ সর্বেক্ষণ সংস্থাগুলিরও।
ভূতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন, বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই মাটি কেঁপে উঠছে। সেই কম্পন ১ থেকে ৩রিখটারের মধ্যে থাকলে সেটা তেমন ভাবে অনুভব করতে পারেন না সাধারণ মানুষ। তবে আশ্চর্যের বিষয হলো, কিছু প্রাণী আশ্চর্যজনকভাবে ঐ কম্পনও অনুভব করে। দেশের কোনও গবেষণা সংস্থা ঐ কম মাত্রার ভূমিকম্পকে খতিয়ানের মধ্যে রাখে না। ৪ রিখটারের বেশি ভূকম্পন হলে তা হিসাবে আনা হয়। আর মাটি কতক্ষণ ধরে কাঁপছে তার সারণি তৈরি করে কোন স্থান কতটা ভূকম্পনপ্রবণ তার একটা ধারণা তৈরি করা হয়। স্থান-কালের ভিত্তিতে দেওয়া হয় সাবধানবাণী। সুনামির ক্ষেত্রে পূর্বাভাস দেওয়া যায়। কারণ সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সুনামিতে পরিণত হতে কিছু সময় নেয়।ভূমিকম্পের প্রাবল্য নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছে ব্যুরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড (বিএসআই)।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন আগে প্রবল কম্পন অনুভূত হয়ে উত্তরবঙ্গে। কম্পন অনুভূত হয় শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তির্ন অঞ্চলে। জানা যায় রিখটার স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল ৩.৮। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হঠাত কম্পনে রাস্তায় নেমে আসেন বহু মানুষ।