‘হটেস্ট জুলাই’-এর প্রভাবে ইতিমধ্যে বরফ গলা ১৯৭ বিলিয়ন টন জল জমা হয়েছে আটলান্টিক মহাসাগরে। জলস্তর বৃদ্ধি পেতে পারে প্রায় ০.২ ইঞ্চি
পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা বাস্তবে পরিণত হল। জমাট বাঁধা বরফের চাঁইয়ের বদলে গ্রিনল্যান্ডে এখন কুলকুল করে বইছে হিমবাহ গলা জলের নদী। আর সেই কারণে ইতিমধ্যেই ১৯৭ বিলিয়ন টন জল জমা হয়েছে আটলান্টিক মহাসাগরে। এর ফলে জলস্তর বৃদ্ধি পেতে পারে প্রায় ০.২ ইঞ্চি বা ০.৫ মিলিমিটার।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং গোটা বিশ্বের দুশ্চিন্তা ক্রমশই বাড়িয়ে চলেছে। এদিকে, ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ুর। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনর শিকার হচ্ছে প্রকৃতি। ওজন স্তর ও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে গলছে উত্তর মেরুর বরফ। ফলে জলস্তর বাড়ছে সমুদ্র, নদী-নালার। বাড়ছে বন্যার আশঙ্কাও। পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে বহুদিন ধরেই সাবধানবাণী শুনিয়ে মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করে আসছেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রগুলিও নানা কর্মসূচি নিয়েছেন এই বিষয়ে। কিন্তু প্রকৃতি চলে আপন খেয়ালে, তাকে রোধ করবে কে? এছাড়া আমরা দিনের পর দিন পরিবেশকে ধ্বংস করে এসেছি, তার ফল তো ভোগ করতেই হবে। জা ও তাপমবিজ্ঞানীরা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন। সেটাই এ বার সত্যি হলো। তীব্র গরমে ইউরোপকে পুড়িয়ে খাক করে তাপপ্রবাহ এগোচ্ছিল গ্রিনল্যান্ডের দিকে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা ছিল গলে যেতে পারে গ্রিনল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরফের পুরু আস্তরণ। অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল সেই আশঙ্কা।
গত কয়েকিদন ধরেই প্রতিনিয়ত বদলে চলেছে গ্রিনল্যান্ডের চেনা ছবি। আগস্টের প্রথম দি গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গলে গিয়েছে প্রায় ১০ বিলিয়ন টন জমাট বাঁধা বরফ। বিজ্ঞানীদের অনুমান, গ্রিনল্যান্ডের প্রায় ৬০ শতাংশ অংশে বরফ গলতে শুরু করে দিয়েছে।
এর আগে ২০১২ সালের জুলাই মাসে বিপুল পরিমাণে বরফ গলেছিল। তবে এ বার পরিস্থিতি যে ২০১২ থেকেও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে তেমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন আবহবিদরা। বিপুল পরিমাণ বরফ জমা রয়েছে গ্রিনল্যান্ডের অন্তত ৮০ শতাংশ জুড়ে। এই পরিমাণ বরফ সম্পূর্ণ গলে গেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা গড়ে ৭ মিটার বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, তলিয়ে যাবে ভূ-খণ্ডের একটা বিরাট অংশ। চলতি বছর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বরফ গলেছে ৩১ জুলাই। দানিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের রিসার্চ স্কলার রুথ মোটরাম বলেছেন, ‘সারা জুলাই মাস ধরে গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ গলেছে। ফলে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে জমা হয়েছে ১৯৭ বিলিয়ন টন জল। এর ফলে জলস্তর বৃদ্ধি পেতে পারে প্রায় ০.২ ইঞ্চি বা ০.৫ মিলিমিটার।’
গ্রিনল্যান্ডে বরফ গলার সমস্যার শুরু সাম্প্রতিক কালে নয়। গত তিন দশক ধরেই মেরু অঞ্চলে বরফ গলছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। তবে চলতি বছর গলনের পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি। এর পিছনে রয়েছে গোটা জুলাই মাস ধরে আলাস্কা, কানাডা, গ্রিনল্যান্ডে চলা তাপপ্রবাহ। এর আগে ২০১৬ সালে বিশ্বে জুড়ে সবচেয়ে বেশি গরম পড়েছিল। তবে চলতি বছর ভেঙে দিয়েছে সব রেকর্ড। রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালেই জুলাই মাস ছিল ‘হটেস্ট জুলাই’। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২.১৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। তবে শুধু গ্রিনল্যান্ড নয়, প্রভাবে পড়েছে উত্তর মেরুতেও। অন্যান্য বছরের থেকে দ্রুত গতিতে বরফ গলছে আর্কটিক অঞ্চলেও। ইউরোপেরও বেশিরভাগ জায়গায় পারদ পেরিয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কোঠা।