বেপাত্তা রাজীবের খোঁজে শহর জুড়ে তল্লাশি, জারি আইনি লড়াই

3 - মিনিট |

১৭ দিনের ছুটিতে রাজীব : রাজ্য

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে খুঁজে পেতে মরিয়া সিবিআই। বুধবারই দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছেন ১৪ জন দুঁদে অফিসার৷ বিশেষ দলটির একমাত্র লক্ষ্য, আগামী ৭ দিনের মধ্যে রাজীব কুমারের হদিশ পাওয়া । সেই লক্ষ্যেই কলকাতা পা দেওয়া মাত্রই তৎপরতা তুঙ্গে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন এই বিশেষ প্রতিনিধিরা ।


রাজীব কুমারকে খুঁজে বের করতে দফায় চলছে অভিযান আজ সকাল থেকেই আলিপুরে আইপিএস কোয়ার্টার, মেস এছাড়াও হোটেল ভিভান্তার রুম এমনকি হোটেলের কিচেনেও দেখা গেছে সিবিআই অফিসারদের অতর্কিত হানা দিতে। এছাড়াও শহরতলীর বিভিন্ন প্রান্তে চলছে রাজীব কুমারের তল্লাশি।

সিবিআইয়ের ৪ জন আধিকারিক বৃহস্পতিবার দুপুরে আইপিএস কোয়ার্টারে ঢোকেন। সিবিআইয়ের আর একটি দল বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ কাউকে না জানিয়েই কার্যত নিজ কৌশলে পার্ক স্ট্রিটে রাজীব কুমারের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। সিবিআইয়ের সাদা রঙের একটি গাড়ি পার্ক স্ট্রিটে রাজীব কুমারের বাসভবনে ঢোকে। প্রায় ৪৫ মিনিট কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে ছিলেন সিবিআই অফিসাররা । কেউ বুঝতেই পারেননি, যে তাঁরা সিবিআই আধিকারিক । পরে বিষয়টি নজরে আসতেই পুলিশ তাঁদের ঘিরে ধরে বের করে দেয় ।

অন্যদিকে ৩৪, পার্ক স্ট্রিটে রাজীব কুমারের বাড়ির সামনে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । আইনি রক্ষাকবচ সরতেই ‘বেপাত্তা’ রাজীবকে খুঁজতে চেষ্টার কোনও কসুর করছে না সিবিআই। ইতিমধ্যে সিবিআই আধিকারিকদের নিরাপত্তার জন্যে শহরে পৌঁছে গিয়েছে এক কোম্পানি সিআরপিএফ । রাজীব কুমার শহরে রয়েছে, নাকি তিনি রাজ্যের বাইরে রয়েছেন,তা এখনও স্পষ্ট নয় । তবে রাজ্যের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ১৭ দিনের ছুটিতে রয়েছেন রাজীব কুমার।

রাজীব কুমারের বাসভবনে গিয়ে ফের নোটিশ ধরালেন সিবিআই অফিসাররা । নোটিশে অবিলম্বে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজীব কুমারকে । ১৬০নং ধারায় বর্তমান এডিজি সিআইডি রাজীব কুমারকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর । বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতেও যান সিবিআই আধিকারিকরা ।


আজ আলিপুরে আইপিএস কোয়ার্টারে তল্লাশি চালান সিবিআই গোয়েন্দারা । একজন এসপি-র নেতৃত্বে বেলা ২টো নাগাদ সিবিআই-এর একটি টিম আলিপুর আইপিএস কোয়ার্টারে পৌঁছয় । ওই দলে একজন এসপি ও দু’জন ডিএসপি র‍্যাঙ্কের অফিসার ছিলেন । তাঁরা সেখানে গিয়ে মেসের ভিতরে ঢুকে প্রতিটা দরজায় টোকা মেরে দেখেন । অর্থাৎ প্রতিটা ঘরে খুঁজে দেখেছেন, কোথাও রাজীব কুমার রয়েছেন কিনা। বেশ কিছুক্ষণ তল্লাশি চালানোর পর সেখান থেকে বেরিয়ে যান সিবিআই আধিকারিকরা । আইপিএস কোয়ার্টারে আচমকা হানা প্রসঙ্গে সিবিআই মুখ না খুললেও, এই দলটি রাজীব কুমারকে খুঁজছে বলে সূত্রে খবর ।

এদিনই দুপুর দেড়টা নাগাদ সিবিআই-এর একটি দল ফের পৌঁছয় রাজীব কুমারের বাড়ি অর্থাৎ ৩৪ পার্ক স্ট্রিটে । রাজীব কুমারের বাড়ির সামনে সেরকম নিরাপত্তা না থাকায় তাঁরা বাড়ির ভিতরে চলে যান । সেখানে গিয়ে রাজীব কুমারের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন । বেশ কিছুক্ষণ পরে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে আসে পুলিশ । তারপর প্রায় ৪৫ মিনিট পর সিবিআই-এর গাড়িকে কার্যত কর্ডন করে বের করে দেওয়া হয় সেখান থেকে । তারপর থেকেই এই বাড়ির দুই গেটে মোতায়েন আছে বিশাল পুলিশ বাহিনী । সাদা পোশাকে পুলিশ কার্যত ঘিরে ফেলেছে এলাকা ।


তারপরেই দুপুর তিনটে নাগাদ ইএম বাইপাসের ‌উপরে রুবি মোড়ের এই পাঁচতারা হোটেলে হানা দেয় সিবিআই গোয়েন্দারা । সেই দলে কলকাতার সদস্যরা যেমন ছিলেন তেমনই ছিলেন দিল্লি থেকে আসা সিবিআইয়ের বিশেষ বাহিনী । হোটেলে ঢুকেই প্রথমে তাঁরা রিসেপশনে হোটেল ভিভান্তার কর্তৃবক্ষের সঙ্গে কথা বলেন । এর পরেই চলে যান হেঁশেলে । রান্নাঘর দিয়ে শুরু হয় তল্লাশি । এরপরে হোটেলের ভিতরে ঢুকে প্রতিটি ঘরে ঘরে চলে রাজীব কুমারের খোঁজ। যদিও এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে হোটেলের ম্যানেজার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে চাননি । তাঁর সাফ কথা, তিনি এই ব্যাপারে কিছু জানেন না । এমনকি রাজীব কুমার কে ? রাজীব কুমারকে তিনি চেনেন না বলেও দাবি করেন সংবাদমাধ্যমের কাছে । বলেন, রাজীব কুমার একজন নন, অনেক রাজীব কুমার আছেন । কার কথা বলছেন ?

এই মুহূর্তে হোটেলে তল্লাশি শেষে রাজীব কুমারের খোঁজে নিউটাউনের দিকে সিবিআই-এর দলটি । ৪টি দলে ভাগ হয়ে শহর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই । সিবিআই সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দারা রাজীবের খোঁজে শহরের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছেন । কলকাতা শহরের মোট ৬টি জায়গায়া সিবিআই তল্লাশি চালাচ্ছে বলে সূত্রে খবর । সিবিআই-এর একটি দল পৌঁছে গিয়েছে কলকাতা বিমানবন্দরেও । তবে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে লুক-আউট নোটিশ জারি রয়েছে। তাই বিমানবন্দর তিনি ব্যবহার করতে পারবেন না ।

অনিশ্চয়তা কাটিয়ে বৃহস্পতিবারই আলিপুর কোর্টে শুরু হল সারদা কাণ্ডে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন সংক্রান্ত মামলাটি৷ বারাসত আদালত থেকে ইতিমধ্যে এই মামলা সংক্রান্ত নথি এসে পৌঁছে গিয়েছে আলিপুর কোর্টে৷ ফলে আজই এই মামলার শুনানি শুরু হল৷

চলতি সপ্তাহে বারাসতের জেলা ও দায়রা আদালত রাজীব কুমারের আগাম জামিনের মামলাটি খারিজ করে দেয়৷ কারণ, সারদা মামলাটি গোড়া থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আদালত অর্থাৎ আলিপুর কোর্টের বিচারাধীন ছিল। তাই সেখানেই মামলাটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় বারাসত জেলা আদালতের তরফে। বিচারক স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সারদার মতো হাইপ্রোফাইল মামলার সম্পূর্ণ নথিপত্র না দেখে কোনওভাবেই শুনানি সম্ভব নয় । সূত্রের খবর, এরপর দ্রুত নথি বারাসত থেকে আলিপুর জেলা আদালতে আনা হয়৷

রাজীব কুমারের ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে কোন নম্বরে তাঁকে পাওয়া যাবে, তা জানতে চেয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্রকে ই-মেল করে চিঠিও দিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। এই মামলায় কীভাবে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে আইনি ঘুঁটি সাজাবেন, তা নিয়ে বেশ সাবধানী পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাঁরা।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news