যাবতীয় জটিলতা কাটিয়ে কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত পাকাপাকি হওয়ায় এলাকার শিক্ষানুরাগী মহলে খুশির জোয়ার বইছে।
বহু জল গড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বাজারিছড়ার শ্রীনগর গ্রামে প্রস্তাবিত মডার্ন কলেজের শিলান্যাস হয়েছে সোমবার। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী জনগণে দানকৃত ২৫ বিঘা জমিতে পূর্ত বিভাগের (বিল্ডিং) ইঞ্জিনিয়ার, পাথারকান্দির সার্কল অফিসার এল খিংনতে এবং এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষানুরাগীদের সঙ্গে নিয়ে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ করে প্রস্তাবিত মডার্ন কলেজের শিলান্যাস করেছেন স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল।
প্রস্তাবিত কলেজের নির্মাণকাজের ফলক উন্মোচনের পর ভূমি পুজো করে ঈশ্বরের নামে ধূপ-দীপ জ্বালিয়ে, নারিকেলের নাড়ু ও বিভিন্ন ফল নিবেদন করে উপস্থিত জনতার করতালির মধ্য দিয়ে প্রস্তাবিত কলেজের শিলান্যাস পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে। যাবতীয় জটিলতা কাটিয়ে এখানে কলেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত পাকাপাকি হওয়ায় এলাকার শিক্ষানুরাগী মহলে খুশির জোয়ার বইছে।
এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এক সভায় বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল বলেন, জনগণ সঙ্গে থাকলে যে-কোনও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দেশ ও দশের জন্য কাজ করা সহজ। এখানে কলেজ স্থাপন নিয়ে শুরুতে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। এক সময় তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু স্থানীয় শুভবুদ্ধিসম্পন্নরা পাশে থাকায় এলাকাবাসীর স্বপ্ন আজ সাকার হল। প্রত্যন্ত এই অঞ্চলে কলেজ নির্মাণ এক চ্যালেঞ্জ ছিল। এ জন্য বিধায়ক প্রত্যেক ভূমিদাতাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুলেননি।
বিধায়ক বলেন, আজকের শুভ শিলান্যাস পর্বে রাজ্যের অন্যান্য বরিষ্ঠ মন্ত্রীদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু নানা ব্যস্ততার জন্য তাঁরা উপস্থিত থাকতে পারেননি। বলেনষ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকার দশ কোটি টাকা ধার্য করেছে। কলেজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর এতে চাকরির জন্য ভূমিদাতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাজারিছড়ার মডার্ন কলেজ থেকে ভবিষ্যতে অনেকে সুষ্ঠু নাগরিক ও দেশের আইকন হিসেবে গড়ে উঠবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল। তিনি জানান, আগামী ৩০০ দিনের মধ্যে কলেজটি গড়ে তোলা হবে।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হৃষিকেশ নন্দি, অমিতাভ দে, যোগমায়া পাল, সুচরিত পাল, সোহেলি দে, মাংলেম সিংহ প্রমুখ অনেকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাজারিছড়ায় কলেজ স্থাপন নিয়ে প্রথম থেকেই এক চরম জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি গুয়াহাটি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। তবে এলাকার সচেতন মহল শুরু থেকেই তৎপর থাকায় বাজারিছড়ায় আজ মডার্ন কলেজের শুভ শিলান্যাস সম্ভব হয়েছে। শুরুতে বাজারিছড়ায় একটি ডিগ্রি কলেজ স্থাপনের জন্য সরকারি খাস জমি চিহ্নিত করা হলেও ওই জমিগুলো নিয়ে পরে আদালত পর্যন্ত মামলা গড়ায়। এই পরিস্থিতিতে মঞ্জুরিকৃত ডিগ্রি কলেজটি অন্যত্র চলে যাওয়ার খবরে সচেষ্ট হন স্থানীয়রা। স্থানীয় শিক্ষাপ্রেমী জনগণ-সহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির একক প্রচেষ্টার ফলে বাজারিছড়ার সরকারি খাস তথা বিতর্কিত জমি বাদ দিয়ে শ্রীনগর গ্রাম লাগোয়া এখটি জমি চিহ্নিত করা হয়। প্রস্তাবিত সরকারি কলেজটি স্থাপনের জন্য গ্রামের মানুষ মিলে জনপ্রতি একবিঘা করে মোট ২৫ বিঘা জমি দান করেন। প্রস্তাবিত কলেজের জন্য যাঁরা ভূমি দান করেছেন তাঁরা যথাক্রমে সুচরিত পাল, নিকুঞ্জ পাল, কল্যাণ পাল, শশাঙ্ক দাস, বিজিত পাল, বিপ্লব পাল, হাবুল পাল, দীপক পাল, কুলেশ পাল, হীরা পাল, হিমাংশু পাল, গৌতম পাল, রামু পাল, জয়দীপ পাল, মধু দাস, সুজিত দাস, সনৎ দাস, সমর দাস, হরমোহন দাস, স্বপনরাম দাস, রত্না চক্রবর্তী, সর্বজিৎ পাল, দেবাশিস পাল, কিশোরেশ পাল, সুজিত পাল, দেবজিৎ পাল, শিবানী পাল প্রমুখ। প্রয়োজনে আরও জমি দান করতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন এলাকার অনেকেই।
প্রসঙ্গত, এদিন পাথারকান্দিতে আরও বেশ কয়েকটি সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন বিধায়ক।