সরকারি কর্মচারি থেকে শিক্ষক শিক্ষিকা সকলের মনেই বকেয়া ডিএ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের অপেক্ষায় সবাই
শিক্ষকদের বদলি নীতি শিথিল করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পার্থদা, আপনারা শিক্ষকদের বদলির বিষয়টা মানবিক দিক থেকে দেখুন । যে শিক্ষকদের বাড়ি মেদিনীপুরে, অথচ শিক্ষকতা করেন বাঁকুড়ায়, তাঁর অসুবিধে হয় । যদি তাঁকে নিজের জেলায় আনা যায় সেটা দেখতে হবে’।
বস্তুত শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গত বছর দুয়েক ধরে বারবারই বলেছেন, শিক্ষকদের বদলি নীতি কঠোর করা হবে । চাইলেন কোনও শিক্ষক বদলি নিতে পারবেন না । যে জেলায় তিনি চাকরি পেয়েছেন সেখানেই শিক্ষকতা করতে হবে । এদিন মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য একশ আশি ডিগ্রি ঘুরে উল্টো কথাই বলেন ।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের কয়েক হাজার শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন । তাঁদের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আপনারা যে স্কুলের টিচার, ধরুন সেখানে দেখলেন অনেকজন আছেন । কিন্তু পাশেই একটা স্কুলে ছাত্র আছে অথচ সেখানে শিক্ষক নেই । আপনারা নিজেরা আলোচনা করে পাশের স্কুলে গিয়ে ক্লাসটা একটু করিয়ে দিন । এই সবটাই অ্যাডজাস্ট করে নিলেই হয়ে যায়’।
সরকারি কর্মচারি থেকে শিক্ষক শিক্ষিকা সকলের মনেই বকেয়া ডিএ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। ষষ্ঠ বেতন কমিশনের অপেক্ষায় সবাই । এবিষয়ে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ভুল বুঝবেন না । আমাদের টাকা আছে তাও দিচ্ছি না নয় । টাকা থাকলে তো দেব।’ শুধু এটুকুই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন রাজ্যের গরিবি বোঝাতে বলেন, ‘আমাদের গরিবের সংসার । আপনাদের ঋণ টাকা দিয়ে শোধ করা যায় না । প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করছি । ইনকামের থেকে বেশি দেনা শোধ করতে চলে যাচ্ছে । ৫৫ হাজার কোটি টাকা এই বছরেই দিতে হবে।’
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে আগাগোড়া শিক্ষকদের মন পাওয়ার চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । কোন অভিযোগের জবাব তিনি দিচ্ছেন তা উল্লেখ না করলেও বক্তব্য জুড়ে যেন সাফাই দিয়ে গেলেন । রাজ্যের সফাইয়ের সঙ্গে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগও তোলেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সিচুয়েশন খুব খারাপ, খুব খারাপ, খুব খারাপ । আজকে মাইনে দিতে পারছি, আশা করছি দিয়ে যেতে পারব কিন্তু ব্যাঙ্কের সব টাকা যদি চলে যায়, অর্থনীতিতে যদি ধস নামে, তখন কী করব ? বিশ্বাস রাখুন । সীমাবদ্ধ ফান্ডে যখন যেমন পারব দিতে দিতে যাব।’
কেন্দ্রকে বিপুল অঙ্কের ঋণ শোধ করতে হলেও রাজ্যের শিক্ষকদের জন্য একগুচ্ছ জনস্বার্থমূলক কাজ করেছে রাজ্য সরকার । বৃহস্পতিবার এমনটাই বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সবাইকে শিক্ষকদের সম্মান করতে আবেদন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে । কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এদিন মমতা বলেছেন, কেন্দ্র সর্বশিক্ষা অভিযান বন্ধ করে দিয়েছে । ইউজিসি গবেষণামূলক কাজে ছাত্রছাত্রীদের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে । ছাত্রছাত্রীদের কাছে একথা জানতে পেরে রাজ্য সরকারের তরফে তাঁদের জন্য ২০ কোটি টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কে১, কে২ এবং কে৩ স্তরে টাকা পাবে । এদিন বেশ কয়েকজন শিক্ষকের হাতে শিক্ষা রত্ন পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী ।