মিজোরামে ফিরতে অনীহা, ব্রু শরণার্থীদের ত্রিপুরায় রাখতে চাইছে সরকার, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর

2 - মিনিট |

৪০০ থেকে ৫০০ ব্রু শরণার্থী পরিবারকে ত্রিপুরাতেই স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করতে চাইছে রাজ্য

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

ব্রু শরণার্থীদের অনেকেই মিজোরামে ফিরতে  চাইছেন না। ফলে, তাঁদের ত্রিপুরাতেই রাখতে চাইছে বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকার। ৪০০ থেকে ৫০০ ব্রু শরণার্থী পরিবারকে ত্রিপুরাতেই স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করতে চাইছে রাজ্য৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রেরিত চিঠিতে এই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷ কারণ ব্যাখ্যা করে চিঠিতে তিনি লিখেন, ত্রিপুরায় আশ্রিত ব্রু শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনে অধিকাংশই অনীহা প্রকাশ করেছেন৷ এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রু শরণার্থীদেরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্যই এই পথ খুঁজে বের করা হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহল মহল৷

কেন্দ্রীয় সরকার, মিজোরাম ও ত্রিপুরা সরকার এবং ব্রু শরণার্থী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ৩ অক্টোবর থেকে রিয়াং শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ এই প্রক্রিয়া ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে বলে স্থির হয়েছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব বিষয়টি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ব্রু শরণার্থীদের মিজোরামে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনীহাই প্রকট হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪৪ পরিবারের ৬৯৯ জন মিজোরামে ফিরে গিয়েছেন৷ তিনি আরও লেখেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শাখার প্রধান সচিবের ব্রু নেতাদের সাথে বৈঠক সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনও অগ্রগতি হয়নি৷ বরং সম্প্রতি ব্রু শরণার্থীরা উত্তর ত্রিপুরা জেলায় দশদা-আনন্দবাজার রাস্তা অবরোধ করেছিলেন, ত্রাণ সামগ্রীর জন্য৷ 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ব্রু নেতারা এখন নিরাপত্তার অজুহাত তুলে মিজোরামে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন৷ শুধু তা-ই নয়, তাঁরা মিজোরামে ডাম্পা ব্যাঘ্র সংরক্ষিত অঞ্চলে পৃথক স্বশাসিত জেলা পরিষদ গঠনের দাবি তুলেছেন৷ তাছাড়া, একাংশ ব্রু শরণার্থীরা ত্রিপুরার বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁদের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেওয়ারও দাবি করছেন৷

মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৯৭ সালে মিজোরাম থেকে ব্রু জনজাতি ৫০৮২ পরিবারের ৩৪ হাজার মানুষ উত্তর ত্রিপুরা জেলায় কয়েকটি শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, এই দেশের নাগরিক স্বদেশেই শরণার্থীর জীবনযাপন করুন তা আমরা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারি না৷ এতে তাঁদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রভাব পড়ে৷ তাই, ব্রু শরণার্থীদের মধ্যে যাঁরা স্বেচ্ছায় ত্রিপুরায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চাইছেন তাঁদের সুযোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব৷ এক্ষেত্রে মিজোরামে প্রত্যাবর্তনে ব্রু শরণার্থীদের যে প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল, একই প্যাকেজে এ-রাজ্যে বসবাস করতে চাইছেন যাঁরা তাঁদের সেই সুযোগ দেওয়ার জন্যও চিঠিতে আবেদন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷  অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে প্রেরিত চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ব্রু শরণার্থীদের এ-রাজ্যে স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জমি অন্যতম প্রধান সমস্যা৷ সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে যথাযথ উপযোগী ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি ভাবতে হবে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, বর্তমান পরিকাঠামোয় প্রচুরসংখ্যক ব্রু শরণার্থী পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দিতে গেলে তাঁদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব পড়বে৷ তাই, রাজ্যের একটি নির্দিষ্ট মহকুমায় ৪০০-৫০০ ব্রু শরণার্থী পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেওয়ার পক্ষেও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব৷ এক্ষেত্রে ওই এলাকা উন্নয়নে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন পড়বে, সে-কথাও তুলে ধরেছেন তিনি৷ তাঁর বক্তব্য, ব্রু শরণার্থীদের রাজ্যের নির্দিষ্ট মহকুমায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দিতে সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়ন খুবই জরুরি৷ তবেই তাঁরা স্বাচ্ছন্দ্য-জীবনযাপন করতে পারবেন৷ তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁর প্রস্তাবটি বিবেচনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন৷

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news