বিচারপ্রক্রিয়া নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এনআরসি-ছুটদের মৌলিক অধিকার হরণ করা চলবে না : নির্মল দে

2 - মিনিট |

ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। সামান্য সন্দেহের বশবর্তী হয়ে একজন লোককে ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রেরণ করা ঠিক নয়

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ-পড়াদের বিচারপ্রক্রিয়া নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনও ধরনের মৌলিক অধিকার হরণ করা চলবে না। দীর্ঘদিন থেকে তাঁরা যে-সব অধিকার ভোগ করে আসছেন, তা যে-কোনও পরিস্থিতিতে বহাল রাখতে হবে। বৃহস্পতিবার করিমগঞ্জের দলীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এভাবেই দলের দাবি সংবলিত অবস্থান স্পষ্ট করেন সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলির অন্যতম সদস্য নির্মল দে। 

সিপিআইএম নেতা নির্মল দে বলেন, রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে দীর্ঘদিনের রাজনীতি এক বহুমাত্রা পেয়েছে। এতদিন ছিল উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতি। বর্তমান সরকারের আমলে উগ্র জাতীয়তাবাদীর সাথে যোগ হয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদ। মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বহু মন্ত্রী ও দলের প্রথমসারির নেতা ছিলেন অসম আন্দোলনের অন্যতম নায়ক। উগ্র জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতাদের দ্বারা পরিচালিত সরকার এনআরসি-কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সিপিআইএম নেতা নির্মল দে আর‌ও বলেন, অসম চুক্তির ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের মাধ্যমে বাঙালি হিন্দু জাতিকে নাগরিকত্ব দিয়ে, অন্য জাতিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে বিজেপি। 

অসমে বসবাসরত সকল জাতির সমান অধিকার নিশ্চিত করারও দাবি জানান নির্মল দে। যাঁরা এনআরসি করিয়েছেন তাঁরাই পুনরায় এনআরসিতে নাম তোলার জন্য সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন। এতে পরিষ্কার, বিজেপি এনআরসিকে হাতিয়ার করে দেশে বিভাজনের রাজনীতি কায়েম করতে চাইছে। সমগ্র দেশে এনআরসি-র বিপক্ষে মত পোষণ করেন তিনি 

সিপিআইএম-এর রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলির সদস্য নির্মল দে বলেন, প্রকৃত কোনও ভারতীয়কে এনআরসি থেকে বাদ দেওয়া চলবে না। এনআরসি-ছুটদের জন্য যে বিচার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এর‌ও তীব্র বিরোধিতা করে বাম নেতা নির্মল দে বলেন, এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়াদের ভবিষ্যত নির্ণয় ট্রাইব্যুনাল করতে পারে না। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল সম্পূর্ণ বিচার ব্যবস্থার অঙ্গ নয়। ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে কোয়াশি বিচার ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে যে-কোন‌ও ব্যক্তিকে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সদস্য বানিয়ে ব্যবস্থা পরিচালনা করা সম্ভব। এতে এনআরসি-ছুটদের বিচারপ্রক্রিয়া কতটুকু সঠিক হবে? এ-নিয়ে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করেন নির্মলবাবু। 

তাঁর দাবি, এনআরসি-ছুটদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতে সরাসরি জুডিশিয়ারি ব্যবস্থার হস্তক্ষেপে জরুরি। নির্মল দে আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, এনআরসি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের হাতে সমঝে দেওয়া মোটেই সমীচীন হয়নি। এনআরসি-ছুটদের মামলার নিষ্পত্তি সরাসরি আদালতে করা হো্ক। এনআরসি-প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হ‌ওয়ার পর জনমনে একটা প্রশান্তি এসেছিল যে, এবার বোধহয় বিদেশি তকমা, বহুচর্চিত ‘ডি’ ভোটার তকমা-সহ বহু সমস্যার নিরসন হবে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। এনআরসিতে নাম নথিভুক্ত হ‌ওয়ার পর‌ও ‘ডি’ ভোটারের নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা একটা ভয়ঙ্কর ব্যাপার বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিপিআইএম নেতা নির্মল দে।

ডিটেনশন ক্যাম্পের ঘোর বিরোধিতা করে সিপিআইএম নেতা নির্মল দে বলেন, ডিটেনশন ক্যাম্পের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। সামান্য সন্দেহের বশবর্তী হয়ে একজন লোককে ডিটেনশন ক্যাম্পে প্রেরণ করা ঠিক নয়। তাই দেশের প্রতিটি ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলির অন্যতম সদস্য নির্মল দে। 

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন বিধায়ক রামেন্দ্র দে বলেন, কাশ্মীর থেকে অসম কোনওটাই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সবকিছুই পরিকল্পিত নাটক। দেশে একটি বিভেদকামী শক্তি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এই বিভেদকামী শক্তিকে প্রতিহত করতে জনগণের কাছে আবেদন রাখেন প্রাক্তন বিধায়ক রামেন্দ্র দে। উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সম্পাদক ধর্মদাস চক্রবর্তী।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news