বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ডিংয়ের পর চাঁদের মাটিতে বেরিয়ে আসবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’ (১,৪৭১ কিলোগ্রাম ওজন)| ৫০০ মিটার এলাকা ঘুরে জল-মাটি সম্পর্কে তথ্য পাঠাবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’
কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছিল রবিবার সন্ধ্যা ৬.৪৩ মিনিট থেকেই, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল সোমবার দুপুর ২.৪৩ মিনিটে| ঘড়ির কাঁটায় দুপুর ২.৪৩ মিনিট, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র থেকে GSLV MK-III-M1 (বাহুবলী : জিএসএলভি মার্ক থ্রি রকেট) রকেটের পিঠে চেপে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে ভারতের চন্দ্রযান-২| তৈরি হল ইতিহাস! চন্দ্রযান-২ মিশনের ৪৮ তম দিনে, (চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে গড় দূরত্ব ৩,৮৪,০০০ কিলোমিটার) চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখবে বিক্রম ল্যান্ডার| শ্রীহরিকোটার লঞ্চপ্যাড থেকে ৪৩.৪৩ মিটার লম্বা, ৬৪০ টন ওজনের জিএসএলভি মার্ক থ্রি রকেট (বাহুবলী) চন্দ্রযান-২-কে নিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে| ক্রমে পৃথিবী থেকে দূরে সরে চাঁদের আওতায় চলে যাবে চন্দ্রযান-২| একবার চাঁদের মাধ্যাকর্ষণের আওতায় চলে গেলে অরবাইটার সমেত ‘বিক্রম’ ল্যান্ডার চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়বে| বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ডিংয়ের পর চাঁদের মাটিতে বেরিয়ে আসবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’ (১,৪৭১ কিলোগ্রাম ওজন)| ৫০০ মিটার এলাকা ঘুরে জল-মাটি সম্পর্কে তথ্য পাঠাবে রোভার ‘প্রজ্ঞান’| ইসরোর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে কে সিবণ বলেছেন, ‘আমি মনে করি, এই মিশনের পর মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে ভারতের পতাকা আরও উঁচুতে উড়বে| আমি নিজেও ভীষণ খুশি| আবারও সবাইকে অভিনন্দন জানাতে চাই|’ ইসরোর প্রধান আরও বলেছেন, ‘আমি মনে করি ইসরোর বিজ্ঞানীরা পুরো মিশনই সফল করবেন| তবে আমাদের মিশন এখনও শেষ হয়নি, বরং শুরু হল বলা যায়| শুধু ইসরো বা ভারত নয়, গোটা বিশ্বের মহাকাশ বিজ্ঞানীরাই এই মিশনের সাফল্যের কামনা করেছেন| তাই সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই|’ গত ১৫ জুলাইয়ের প্রযুক্তিগত ত্রুটি প্রসঙ্গে কে সিবণ বলেছেন, ‘আমরা প্রযুক্তিগত ত্রুটির সম্মুখীন হয়েছিলাম| ত্রুটি ধরা পরার পর কঠোর পরিশ্রম করেছেন বিজ্ঞানীরা| সেই সমস্যা কাটিয়ে উৎক্ষেপণ হল চন্দ্রযান-২-এর|’
গত ১৫ জুলাই ভোররাত ২.৫১ মিনিট নাগাদ উৎক্ষেপণের ঠিক ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে স্থগিত রাখা হয়েছিল চন্দ্রযান-২-এর অভিযান| চন্দ্রযান-২-এর বাহন জিএসএলভি মার্ক থ্রি ওরফে বাহুবলী রকেটের ক্রায়োজনিক জ্বালানির ট্যাঙ্কে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল| এরপর সময় নষ্ট না করে গত ১৮ জুলাই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)-র পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২২ জুলাই দুপুর ২.৪৩ মিনিট নাগাদ চন্দ্রযান-২-এর উৎক্ষেপণ হবে| সেই মতো সোমবার দুপুর ২.৪৩ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর উদ্দেশ্যে রওনা দিল চন্দ্রযান-২| উৎক্ষেপণের আগে মসৃণ গতিতেই সম্পন্ন হয়েছে GSLV MK-III-M1 (বাহুবলী : জিএসএলভি মার্ক থ্রি রকেট)-এর লিকুইড কোর স্টোরেজ (এল১১০)-এর ইউএইচ ২৫ (জ্বালানি) ভরার কাজ| এছাড়াও মসৃণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে লিকুইড কোর স্টোরেজ (এল১১০)-এর এন ২০৪ ও ক্রায়োজনিক স্টেজ-এর (সি২৫) লিকুইড হাইড্রোজেন ভরার কাজ| ইসরো জানিয়েছে, ২২ জুলাই দুপুর ২.৪৩ মিনিটে উৎক্ষেপণের পর ৪৮ তম দিনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে (গন্তব্য : চাঁদের কক্ষপথ এবং দক্ষিণ মেরু, ৭০ ডিগ্রি অক্ষাংশ) পা ছোঁয়াবে বিক্রম ল্যান্ডার| সমস্ত কিছু সফল হলে চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার ইতিহাস গড়বে ভারত| প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ২২ অক্টোবর যাত্রা শুরু করেছিল চন্দ্রযান-১| চাঁদ নিয়ে চন্দ্রযান-১ ছিল ভারতের প্রথম সাফল্য| সেই অভিযানের সাফল্যই দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান বা চন্দ্রযান-২ প্রকল্পকে উত্সাহিত করেছে| পরে মঙ্গল অভিযানের সাফল্য সেই প্রকল্পকে তরান্বিত করে|
চন্দ্রযান-২ মিশনের সফল উৎক্ষেপণের পর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী| মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের একটি বিশেষ মুহূর্ত| চন্দ্রযান-২-এর সফল উৎক্ষেপণ আমাদের বিজ্ঞানীদের দক্ষতা এবং বিজ্ঞানের নতুন সীমা নির্ধারণে ১৩০ কোটি ভারতীয়ের দৃঢ়তাকে ব্যক্ত করে| প্রত্যেক ভারতীয় গর্বিত| টেলিভিশনের দিকে তাঁকিয়ে ঐতিহাসিক সেই মুহূর্তের সাক্ষীও থাকেন প্রধানমন্ত্রী| চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের পর সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার চেয়ারম্যান তথা ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু জানিয়েছেন, “সফলভাবে উৎক্ষিপ্ত হয়েছে চন্দ্রযান-২। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই দেশবাসীকে। আমাদের বিজ্ঞানীদের একটি বিশেষ প্রশংসা প্রাপ্য। তাঁদের কৃতিত্ব দেশের গর্ব বাড়িয়েছে।’ ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, “চন্দ্রযান-২-এর সফল উৎক্ষেপণের জন্য ইসরোর বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ। উচ্চাশার এই সম্পূর্ণ ভারতীয় মিশনটি লঞ্চ করে ভারতের মহাকাশ গবেষণায় টিম ইসরো একটি অধ্যায় রচনা করল। এই বিজ্ঞানী এবং টিম ইসরোর জন্য গোটা দেশ অত্যন্ত গর্বিত।” ইসরোর সাফল্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রবীণ বিজেপি নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ রবীন্দ্র কিশোর সিনহা টুইট করেছেন, ‘দেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবের মুহূর্ত| চন্দ্রযান-২-এর সফল উত্ক্ষেপণের জন্য ইসরো-র প্রতিটি বিজ্ঞানী ও দেশবাসীকে অভিনন্দন|’ চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের পর ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো-কে অভিনন্দন জানিয়ে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বললেন, “চাঁদ ভারতের অপেক্ষায় রয়েছে। সফলভাবে উৎক্ষিপ্ত হয়েছে চন্দ্রযান-২। একই সঙ্গে সফল হয়েছে ভারতের প্রচেষ্টা। এমন একটি মুহূর্ত যা আমাদের একটি মহান জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ১৩০ কোটি ভারতীয়কে গর্বিত করার জন্য যে সব বিজ্ঞানী ও স্পেস ইঞ্জিনিয়াররা দিনরাত্রি এক করে পরিশ্রম করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।” ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “চন্দ্রযান-২ -এর সফল উৎক্ষেপণের জন্য ইসরোর বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ। ভারতের প্ৰথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উদ্যোগে ‘আইএনসিওএসপিএআর’, যা পরে ইসরো হয়েছে, সংস্থাকে অর্থসাহায্য করার এটিই আদর্শ সময়। ২০০৮ সালে এই চন্দ্রযান-২ প্রজেক্টের অনুমোদন দেওয়া জন্য ধন্যবাদ ডা. মনমোহন সিং-কেও।”