সোমবার পর্যন্ত রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে রক্ষাকবচ দিয়েছেন বিচারপতি মধুমতী মিত্র । বিচারপতি জানান, সোমবার সকাল সকাল সাড়ে এগারটায় আবার শুনানি হবে এই মামলার
সোমবার পর্যন্ত গ্রেফতার করা যাবে না রাজীব কুমারকে ৷ ফের রাজীব কুমারের গ্রেফ্তারির ওপর স্থগিতাদেশ বাড়াল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ সোমবার পর্যন্ত রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না বলে রক্ষাকবচ দিয়েছেন বিচারপতি মধুমতী মিত্র । বিচারপতি জানান, সোমবার সকাল সকাল সাড়ে এগারটায় আবার শুনানি হবে এই মামলার ৷
সিবিআইয়ের আইনজীবী ওয়াই জেড দস্তুর বক্তব্য পেশ করবেন সোমবার ৷ রাজীব কুমারের আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় এতদিন রাজীবের তরফে সওয়াল করেছেন যে যুক্তি দেখিয়ে ৷ ওইদিন সেই যুক্তিরই লিখিত বয়ান জমা পড়বে কোর্টে ৷
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজীব মামলার শুনানিতে তাঁর আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় আর্জি জানান, তাঁর মক্কেলের রক্ষাকবচের মেয়াদ সোমবার পর্যন্ত বাড়ানো হোক । কিন্তু বিচারপতি মধুমতী মিত্র তা খারিজ করে দেন । বদলে একদিন বাড়ানো হয়েছিল রাজীব কুমারের রক্ষাকবচ । শুক্রবার পর্যন্ত রক্ষাকবচের মেয়াদ বাড়িয়ে ছিলেন বিচারপতি । ওইদিন এই নির্দেশ দিতে গিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিচারপতি মধুমতী মিত্র । তিনি বলেন, ‘বহুদিন ধরে এই মামলা চলছে । সব কিছুর একটা শেষ প্রয়োজন’।
রাজীব কুমারকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই । সেই আবেদনের বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার । শুনানির সময় রাজীব কুমারের আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মদন মিত্রের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না । সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে ডাকা হয়েছিল সাক্ষী হিসাবে । বিকেল সাড়ে ৪টেয় তাঁকে অভিযুক্ত হিসাবে গ্রেফতার করা হয় । ওই ঘটনা যাতে আমার মক্কেলের সঙ্গেও না ঘটে তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’
এর আগে দফায় দফায় রাজীব কুমারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনি রক্ষাকবচের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট । গত ২০ আগস্ট বিচারপতি ২৭ তারিখ পর্যন্ত রাজীব কুমার মামলার শুনানি স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন । তবে সেই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাজীবের রক্ষাকবচ বজায় থাকবে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ।
শুক্রবার রাজীব কুমারের তরফে আইনজীবী মিলন মুখার্জী তাঁর বক্তব্য পেশ করেন ৷ তিনি বলেন, ‘এই দেশের আইন কি বলে একজন সাক্ষীকে ১৬০ তে নোটিশ দিয়ে গ্রেফতার করা যায়’? ‘ সারদা মামলায় একজন সাক্ষী হয়ে রাজীব কুমারকে বর্তমানে নিজের বাড়িতে বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি ৷ তিনি বলেন, রাজীব কুমার জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজীব কুমারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ৷ তাই বাড়িতে না আসার কথা বলা সম্ভব ছিল না রাজীব কুমারের পক্ষে ৷
তিনি আরও বলেন, ‘১৬৮ জন পুলিশ অফিসারের মধ্যে মাত্র ৪-৫ জনকে এখন পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করতে পেরেছে সিবিআই । আমার মক্কেল ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির আগে দোষীই ছিলেন না । হঠাৎ করে যেন বড়ো অপরাধী বানানো হচ্ছে । চুপচাপ থাকা মানেই কি তিনি সিবিআইয়ের প্রশ্নের উত্তরে সঠিক বলছেন না’? এরমধ্যেই আবার সিবিআই ডেকে পাঠিয়েছে রাজীব কুমারকে । তিনি সিআইডি আধিকারিকদের মারফত জানিয়েছেন, যেতে পারবেন না । কিন্তু সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, হাজিরা দিতেই হবে রাজীব কুমারকে ।
সুপ্রিম কোর্ট রক্ষাকবচ তুলে নেওয়ার পর চিট ফান্ড মামলায় রাজীব কুমার কলকাতা হাইকোর্ট থেকে সাময়িক রক্ষাকবচ পেয়েছেন । এর মধ্যেই গত ১৬ আগস্ট রাজীব কুমারকে ডেকে পাঠান সিবিআই আধিকারিকরা । কিন্তু সকালে সিআইডির দুই আধিকারিক রাজীব কুমারের দূত হয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে যান । চিঠি দিয়ে সিবিআই আধিকারিকদের রাজীব বলেন, ১৯ তারিখ মামলার শুনানি রয়েছে । সেখানে আদালত কী বলে সেটা দেখেই তিনি হাজিরা দেবেন । কিন্তু সিবিআই আধিকারিকরা ওই দুই দূতকে স্পষ্ট বলে দেন, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় এজেন্সি যখন ডাকবে তখনই রাজীব কুমারকে হাজিরা দিতে হবে । এ ব্যাপারে অনড় থাকে সিবিআই । অবস্থান বদল করেন রাজীব কুমার । দুপুরে সিবিআই দফতরে পৌঁছন কলকাতা ও বিধাননগরের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার । তাঁকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জেরা করেন গোয়েন্দারা ।
সেই ৩ ফেব্রুয়ারি লাউডন স্ট্রিটের বাংলোয় সিবিআই হানার পর থেকে রাজীব কুমারকে নিয়ে টানাপড়েন চলছে । মাঝে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই তৃতীয় জায়গা হিসেবে টানা পাঁচদিন শিলং-এ জেরা করা হয় চিটফান্ড তদন্তের জন্য গঠিত রাজ্য সরকারের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমের প্রধানকে ।