ত্রিপুরার মন্দিরগুলিতে রাজ্য কিংবা বহিঃরাজ্যের কোনও ব্যক্তি পশু বা পাখি বলি দিতে পারবেন না, রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ত্রিপুরা সরকার দেবী ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির আন্তর্জাতিক পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টায় রয়েছে
ত্রিপুরার সমস্ত মন্দিরে পশু-পাখি বলি নিষিদ্ধ করল ত্রিপুরা হাইকোর্ট৷ শুক্রবার ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি অরিন্দম লোধের ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দিয়ে রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে প্রাক্তন জেলা ও দায়রা বিচারক সুভাষ ভট্টাচার্য পশু বলি বন্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন ত্রিপুরা হাইকোর্টে৷ ওই মামলায় ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যসচিব, গোমতি জেলার জেলাশাসক তথা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের সেবাইত, ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান, উদয়পুরের মহকুমাশাসক তথা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির পরিচালন কমিটির সদস্যসচিব এবং কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের সচিবকে পক্ষভুক্ত করা হয়েছিল৷ ওই মামলায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর শুনানি সম্পন্ন হয়েছে৷ আজ হাইকোর্ট মামলায় রায় শুনিয়েছে৷
ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি অরিন্দম লোধের ডিভিশন বেঞ্চ ওই মামলার সমস্ত আবেদন গ্রাহ্য করে রাজ্যের সমস্ত মন্দিরে পশু কিংবা পাখি বলি প্রথায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷
ত্রিপুরা হাইকোর্ট রায় দান করে বলেছে, ত্রিপুরার মন্দিরগুলিতে রাজ্য কিংবা বহিঃরাজ্যের কোনও ব্যক্তি পশু বা পাখি বলি দিতে পারবেন না৷ রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ত্রিপুরা সরকার দেবী ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির আন্তর্জাতিক পর্যটনক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টায় রয়েছে৷ প্রত্যেক ধর্মের মানুষ ওই মন্দির পরিদর্শনে আসবেন৷ সেক্ষেত্রেও কোনও ব্যক্তি, তিনি যে কোনও ধর্মেরই হোন, মন্দিরে বলি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাতে আপত্তি জানাতে হবে৷ বরং বলির জন্য যে পশু বা পাখি আনা হবে তাদের রক্ষণাবেক্ষণের জায়গা রাজ্য সরকারকেই স্থির করতে হবে৷
ত্রিপুরা হাইকোর্ট গোমতি ও পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারদের এই রায় কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ দিয়েছে৷ সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট প্রশাসনিক আধিকারিকদের ওই রায় বলবতে দায়বদ্ধ বলে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে৷
এদিকে, ত্রিপুরা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারের মুখ্যসচিবকে এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জারি করার নির্দেশ দিয়েছে৷ পাশাপাশি অন্তত দুটি মন্দির যেমন দেবী ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির এবং চতুর্দশ দেবতা মন্দিরে ওই নির্দেশ পালন সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নজরদারি রাখতে সিসি টিভি বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ এখানেই থেমে থাকেনি হাইকোর্ট৷ প্রতিমাসে ওই মন্দিরের সিসি টিভি ফুটেজ হাইকোর্টকে দেওয়ার জন্যও নির্দেশ জারি করেছে আদালত৷
এদিকে, ত্রিপুরার ৮ জেলার জেলাশাসকদের নিজ নিজ অঞ্চলে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে ত্রিপুরা হাইকোর্ট৷ বলি বন্ধের রায়ে মানুষের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি যাতে ফুটে উঠে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ এরই সাথে সংবিধান মেনে রাজ্য সরকারকে এই রায়ের পক্ষে প্রচার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে বলেছে ত্রিপুরা হাইকোর্ট৷