দি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টাফ সিলেকশন কমিশন (রিপিলিং) বিল’ পাশ করানোর কথা ছিল। নতুন করে ফেরানো সংক্রান্ত বিল নিয়ে আইনি জটিলতার প্রশ্ন ওঠে। বিরোধীরা এই আইনি জটিলতা এবং বিলে কিছু সমস্যার দাবি তোলেন।
বিরোধীদের আপত্তিতে স্টাফ সিলেকশন কমিশন সংক্রান্ত বিল পাশ করা আপাতত স্থগিত রাখল সরকার। এ রকম ঘটনা এ রাজ্যে অভূতপূর্ব। এটিকে ‘সংসদীয় রীতির জয়’ বলে মন্তব্য করেন বিরোধী দলনেতা।
এদিন ‘দি ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টাফ সিলেকশন কমিশন (রিপিলিং) বিল’ পাশ করানোর কথা ছিল। নতুন করে ফেরানো সংক্রান্ত বিল নিয়ে আইনি জটিলতার প্রশ্ন ওঠে। বিরোধীরা এই আইনি জটিলতা এবং বিলে কিছু সমস্যার দাবি তোলেন। তাঁরা বলেন, এই বিল নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে এবং প্রয়োজনে বিলের ভাষা বদলের দাবি তোলেন।
এদিন বিধানসভায় বিল নিয়ে আলোচনা শুরুর পর আব্দুল মান্নান এবং অসিত মিত্র, বাম বিধায়ক প্রদীপ সাহা প্রমুখ বিলের আইনি জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিলে উল্লেখ রয়েছে, ‘এই কমিশন তৈরির ক্ষেত্রে সরকারের কোনও আর্থিক দায়ভার নেই ‘— এই লাইন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা। বিরোধী দলনেতা মান্নান, সিপিএমের পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের অসিত মিত্র প্রমুখ বিলের সংশোধনী চান। অসিতবাবু অধিবেশনে বলেন, “সরকার মহম্মদ বিন তুঘলকের মত আচরণ করছে। এটা স্থগিত রেখে নতুন করে বিল আনুন।“
আলোচনার মাঝপর্বেই অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের শিক্ষা ও পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে বলতে বলেন। পরিষদীয় মন্ত্রী জানিয়ে দেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান আলোচনার মধ্যে দিয়ে করা হচ্ছে, ততক্ষন বিল পাস করবে না সরকারপক্ষ। এই বিলে অনেক আইনি প্রশ্ন তুলে ধরা হয়েছে। তাই এই নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছেন। এখানে আলোচনা শেষ করা ঠিক হবে না।
এর পর স্টাফ সিলেকশন কমিশন বিলের আলোচনা আজ মাঝপথে স্থগিত করে দেয় সরকার। অধ্যক্ষ ঘোষণা করেন, এই বিল নিয়ে ফের আগামী ৩ সেপ্টেম্বর আবার কথা হবে। যেখানে আলোচনা শেষ হয়েছে সেখান থেকে আলোচনা হবে। রাজ্য বিধানসভায় এটা সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। চার বছরে এই প্রথম বিরোধীদের দাবি মেনে কোনও বিল তড়িঘড়ি পাস করানোর পথ থেকে সরে এসে আলোচনার পথ খোলা রাখল সরকার। বিজেপি-র পরিষদীয় নেতা মনোজ টিগ্গা পরে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “একবার যে বিল (সংশোধন) রিপিল হয়েছে, আবার সেটির রিযিল কী করে হয়? মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ৩৪ হাজার নিয়োগকরবেন। সেটার জন্য তড়িঘড়ি বিল করতে গিয়ে অসম্পূর্ণ খসরা করা হয়েছে। অর্থ দফতরের অনুমোদন ছাড়াই এগোন হচ্ছিল। কী ভাবে সরকার এ রকম ভুল করে। ২০২১-এর ভোটকে মাথায় রেখেয়এটা একটা চমক দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। বেকারদের প্রলোভনের চেষ্টা হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিলের খসরা চেয়ে পাইনি। আজ সকালে এটা বিলি হলেও আমাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছিল।“
এ ব্যাপারে মনোজবাবুর সঙ্গে সহমত পোষণ করেন আফ্দুঢ় মান্নান। তিনি সাংবাদিকদের পরে বলেন, “এই বিল সংবিধানের ২০৭ ও ২০৮ ধারার বিরোধী। আমরা আগেই প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলাম অ্যাডভোকেট জেনারেলকে আনুন। উনি আমাদের আইনগত প্রশ্নগুলো বুঝিয়ে দিন। আমাদের কথা না শুনে জোর করে বিল পাশের চেষ্টা হচ্ছিল। আমরা বেকারদের চাকরির বিরোধী বলে একটা রটনার চেষ্টা হচ্ছিল। স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা চাই বেকাররা কাজ পাক। তা, ওদের দলের ছেলেরাই হোক। কিন্তু সেই কাজের যেন আইনি বৈধতা থাকে।“সুজনবাবু সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা রিপিলিং কথাটার সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু ডাবল রিপিলিং এই প্রথম দেখছি। ২০১১-তে চাকরি দেওয়ার নামে একটা আইন হল, ’১৭-তে সেটা রিপিল হল। এখন আবার সেটা রিপিলয়করার চেষ্টা। সরকারের মন্ত্রী, বিধানসভার অধ্যক্ষরা যখন ক্রমান্বয়ে প্রতিবাদের মুখে বুঝলেন ভুল হয়ে যাচ্ছে, তখন পিছিয়ে এলেন। আসলে, সরকারের একটা চূড়ান্ত অস্থিরতা চলছে। এসব তারই প্রকাশ।”