ইহজগতের সকল মায়া কাটিয়ে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে শুক্রবার সকাল ৯:২০ মিনিটে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন অমায়িক সাংবাদিক বিশ্বজিৎ
তরুণ সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায়বর্মণ আর নেই৷ দৈনিক যুগশঙ্খ-এর বার্তা সম্পাদক সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায়বর্মণ ইহজগতের সকল মায়া কাটিয়ে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে শুক্রবার সকাল ৯:২০ মিনিটে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন অমায়িক সাংবাদিক বিশ্বজিৎ। গত সোমবার (২১ অক্টোবর) থেকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত, বিশ্বজিৎ রায়বর্মণ বিশিষ্ট কবি-সাংবাদিক ও সাহিত্যিক অতীন দাশের জামাতা ছিলেন। মৃত্যুকালে রেখে গেছেন স্ত্রী অনন্যা রায়বর্মণ, আর্য (অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে), মেয়ে ময়ূরী (দ্বিতীয় শ্রেণি), বাবা-সহ বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বহু সাংবাদিক এবং গুণমুগ্ধদের।
জানা গেছে, দিনদশেক আগে তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হলে তাঁকে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসকরকারি হাসপাতালে নিয়ে ভরতি করা হয়। যথারীতি চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার পর বাড়ি চলে আসেন। বাড়ি ফেরার দুদিন পর থেকে নানা উপসর্গ দেখা দেয় তাঁর শরীরে৷ ফের ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সোমবার তাঁকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে শিলঙে নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল হেল্থ অ্যান্ড মেডিক্যাল সায়েন্স (নেইগ্রিমস)-এর উদ্দেশে রওয়ানা হন আত্মীয়স্বজনরা। কিন্তু স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হলে পাঁচগ্রাম থেকে তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এখানে সোজা ঢোকানো হয় আইসিইউ-তে৷ এখানে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বাবুল বেজবরুয়ায় নেতৃত্বে গঠিত চিকিৎসকদের এক বিশেষ দল শুরু করেন চিকিৎসা। এদিন থেকেই বিশ্বজিৎকে লাইফসাপোর্টে রাখা। অবশেষে ডাক্তারদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে এদিন সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি|
বিশ্বজিৎ রায়বর্মণ যুগশঙ্খ পত্রিকা গোষ্ঠী ছাড়াও আকাশবাণী শিলচর-সহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। আকাশবাণী শিলচরের যুববাণী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা কর অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকা গোষ্ঠীর গুয়াহাটি সংস্করণের বার্তা সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বজিৎ একজন মৃদুভাষী অমায়িক আপাদমস্তক ভদ্র দক্ষ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে সাংবাদিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিলচরের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন আর্য সংস্কৃতি বোধনী সমিতির জন্মলগ্ন থেকে বিশেষ বিশেষ পদে দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
এদিকে বিশ্বজিৎ রায়বর্মণের মৃতদেহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথমে রংপুরে তাঁর শ্বশুর বাড়ি তথা প্রবীণ সাংবাদিক অতীন দাশের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ক্রিয়াকর্মের পর বেলা দেড়টায় রংপুরে যুগশঙ্খ-এ দফতর, পরে যথাক্রমে শিলচর প্রেসক্লাবে এনে সকলের প্রিয় প্রয়াত বিশ্বজিৎকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। তার পর তারাপুরে উকিল বাজারে তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে মৃতদেহ আনা হয়। সেখান থেকে শিলচর শ্মাশান ঘাটে এনে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয় বিশ্বজিৎ রায়বর্মণের।
বিশ্বজিৎ রায়বর্মণের মৃত্যুতে শিলচরের সাংসদ ডা. রাজদীপ রায়, কেআরিস টাইমসের সম্পাদক বিশ্বদীপ গুপ্ত, বরাক উপত্যকার সব বিধায়ক, শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব-সহ অসংখ্যজন শোক জ্ঞাপন করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা সকলেই প্রয়াত বিশ্বজিতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।