তিহাড় জেলে চিদম্বরমকে আলাদা সেল-এ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁকে ওয়েস্টার্ন টয়লেট ব্যবহার করতে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক
শত চেষ্টার পরেও শেষরক্ষা আর করা গেল না। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে তিহার জেলে পাঠানোর নির্দেশ দিল স্পেশাল সিবিআই আদালত। চোদ্দ দিনের জন্য তাঁকে জেল হেফাজতে রাখা হবে। এ ব্যাপারে পরবর্তী শুনানি হবে ১৯ সেপ্টেম্বর।
বৃহস্পতিবারটা যেন চিদম্বরমের জন্য লক্ষ্মীবার হল না। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট যে মামলা করেছিল, তার বিরুদ্ধে রেহাই চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি আর বানুমথি ও এ এস বোপান্নার ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার সকালে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে চিদম্বরমের বিরুদ্ধে। তাই আগাম জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সব নথি ও তথ্য খতিয়ে দেখে তবেই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এই মুহূর্তে তাঁকে কোনওভাবে সুরক্ষা দেওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের ওই রায় ছিল চিদম্বরমের জন্য দিনের প্রথম বড় ধাক্কা।
তখনই আন্দাজ হয়ে গিয়েছিল আরও বড় বিপদ হয়তো অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য। কারণ, দুপুরেই বিশেষ সিবিআই আদালতে আইএনএক্স মিডিয়া মামলার শুনানি ছিল। কংগ্রেস নেতারা আশঙ্কা করছিলেন, যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট চিদম্বরমকে কোনও সুরক্ষা দিতে চায়নি, তাই নিম্ন আদালত কোনওরকম ঝুঁকি হয়তো নেবে না। চিদম্বরমকে জেল হেফাজতেই পাঠানো হতে পারে। আর, তাই হল। এ দিন বিকেলে রায় ঘোষণার সময় সিবিআই স্পেশাল কোর্টের বিচারকরা বলেন, যেহেতু চিদম্বরম ইতিমধ্যেই চোদ্দ দিন পুলিশ তথা সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন, তাই তাঁকে এ বার জেল হেফাজতে পাঠানো হচ্ছে। তিহার জেলেই আগামী চোদ্দ দিন থাকবেন তিনি।
শুনানির সময় চিদম্বরম নিজে আবেদন করেন। তিনি বলেন, “জেল হেফাজতে আমাকে যেন না পাঠানো হয়। আমি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হেফাজতে যেতে রাজি। ইডি চাইলে আমাকে হেফাজতে নিতে পারে।”
কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবীরা তাতে আপত্তি করেন। বলেন, চিদম্বরমকে জেল হেফাজতেই পাঠানো হোক। কারণ, উনি প্রভাবশালী ব্যক্তি। কোনও রকম সুযোগ দেওয়া হলে সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন। সিবিআই চিদম্বরমকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করলেও ইডি এখনও তাঁকে হেফাজতে রাখতে চায়নি। চিদম্বরমকে এখন জেল হেফাজতে পাঠানো হচ্ছে। এরপর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট চাইলে তাঁকে হেফাজতে চাইতেই পারেন।
আদালতে চিদম্বরমের হয়ে সিবিআইকে জোরালো সওয়াল করেন তাঁর আইনজীবী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, ওনার ৭৪ বছর বয়স হয়েছে। সারা দিনে তাঁর শারীরিক অসুস্থতার জন্য বেশ কিছু ওষুধ খেতে হয় তাঁকে। তাই তাঁকে যেন তিহাড় জেলে পাঠানো না হয়। কিন্তু সেই সব আবেদনও শুনতে রাজি ছিলেন না বিচারক। এই অবস্থায় তিহাড়ে চিদম্বরমের জন্য বিশেষ সেল ও আনুসঙ্গিক সুবিধা দাবি করা হয়েছে তাঁর আইনজীবীদের তরফে। সেই দাবি আদালত মেনে নেয়। তিহাড় জেলে চিদম্বরমকে আলাদা সেল-এ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁকে ওয়েস্টার্ন টয়লেট ব্যবহার করতে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।