ত্রিপুরার প্রায় ৬৫ শতাংশ ভূমি সবুজ জঙ্গলে ঢাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩৬০ প্রজাতির ঔষধি গাছ রয়েছে।
ত্রিপুরার গ্রামীণ অর্থনীতি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চাঙ্গা করবে আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছের চাষ। ত্রিপুরার প্রায় ৬৫ শতাংশ ভূমি সবুজ জঙ্গলে ঢাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩৬০ প্রজাতির ঔষধি গাছ রয়েছে। যেগুলোর কোনও পরিচর্যা করতে হয়না, যুগ যুগ ধরে এগুলি জঙ্গলেই বেড়ে ওঠে।। এই সকল ঔষধি গাছগুলিকে একটুখানি পরিচর্যা করলে বা খালি জায়গায় এগুলির চাষ করলে রাজ্যের অর্থনীতি দারুণ উন্নত হবে। তৈরি হবে কর্ম সংস্থানের নতুন পথ। এই অভিমত ত্রিপুরার বিশিষ্ট আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক এবং গবেষক ডা. অচিন্ত্যকুমার দেবের।
হিন্দুস্থান সমাচার-কে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ-কথা বললেন। ত্রিপুরা রাজ্যের মাটিতে যে সকল আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছ জন্মে সেগুলির গুণগতমান সবচেয়ে ভালো। কারণ রাজ্যের বেশির ভাগ ভূমি অর্গানিক এবং কোনও এলাকার মাটিতে দূষিত খনিজ আর্সেনিক পাওয়া যায়নি। ত্রিপুরার মতো সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতেও রয়েছে ঔষধি গাছের ভাণ্ডার।
ত্রিপুরা, ভারত তথা এশিয়া দেশগুলির আয়ুর্বেদিক ঔষধি কাঁচামালের বিপুল পরিমাণ চাহিদা রয়েছে ইউরোপ এবং আমেরিকার দেশগুলিতে। কারণ তারা জানে, এশিয়ার দেশগুলোতে যে সকল আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছ পাওয়া যায় সেগুলির গুণগত মান খুব ভালো। তাছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলির জলবায়ু ঔষধি গাছ চাষের উপযুক্ত নয়। তাই তাদেরকে এশিয়ার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে আয়ুর্বেদিক ওষুধের কাঁচামালের জন্য। ফলে এই সমস্ত এলাকা থেকে আয়ুর্বেদিক ঔষধের কাঁচামাল আমদানি করছে এবং অধিক পরিমাণে আমদানি করতে চাইছে।
সম্প্রতি আমেরিকার কিছু আয়ুর্বেদ ঔষধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ত্রিপুরা থেকে ১০০০ কেজি গুলঞ্চ গাছ নিতে চেয়েছে। রাজ্যে গুলঞ্চ থাকলেও এখনও এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি যে চাইলেই ত্রিপুরা স্বল্প সময়ে এক হাজার কেজি গুলঞ্চ সংগ্রহ করে রফতানি করা সম্ভব। কারণ এই সকল গাছ নষ্ট না করে নির্দিষ্ট সংখ্যায় তা তুলে আনার মতো দক্ষ লোক রাজ্যে নেই, পাশাপাশি আয়ুর্বেদিক গাছকে প্রক্রিয়াকরণ করার মতো ব্যবস্থাও রাজ্যে এখনও তৈরি হয়নি বলেও জানান ডা. দেব।
তবে তাঁর মতে, রাজ্যেও বিপুল পরিমাণে আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছ চাষ হবে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হবে। কারণ রাজ্য সরকারের বন দফতর এই সব ঔষধি গাছের চাষ এবং জঙ্গল থেকে সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে গ্রামীণ ও পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের। প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন অনেক চাষি রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় নানা প্রজাতির আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছের চাষ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে ত্রিপুরা রবার চাষিরা রবার উৎপাদন করেন। এর পর ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে কিনে আবার এগুলি কিছুটা প্রক্রিয়াকরণের পর বাইরে রফতানি করেন। ঠিক একইভাবে রাজ্যের বিস্তীর্ণ ফাঁকা জমিতে চাষিরা ঔষধি গাছের চাষ শুরু করলে ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে এই সকল ঔষধি গাছ কিনে প্রক্রিয়া করে দেশ বিদেশে রফতানি করবেন। বর্তমানে চীন নিজেরা চাষের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে কিছু কিছু ঔষধি গাছ আমদানি করছে। ত্রিপুরা থেকে চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের কথা চলছে। তা হয়ে গেলে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মধ্যে আয়ুর্বেদিক ঔষধি গাছ রফতানিকারকরা ত্রিপুরা থেকে কাঁচামাল কিনে খুব সহজেই সমুদ্রপথে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারবেন।
বর্তমান বিশ্বে যত আয়ুর্বেদিক ঔষধ ব্যবহার হয় তার ৬০ শতাংশ আমেরিকা ব্যবহার করছে। এর একচেটিয়া সুবিধা নিচ্ছে চীন। ত্রিপুরা তথা সমগ্র উত্তপূর্ব ভারত চাইলে এই সুবিধা নিতে পারে। কারণ দেশের এই অঞ্চলের জঙ্গলে ঔষধি গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। সরকারি সহযোগিতা এবং চাষিরা একটু ইচ্ছে করলে আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে উত্তরপূর্বের আয়ুর্বেদিক ঔষধি।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, ভারত সরকারের ফরেস্ট রিসার্চ লাইভলিহুড মিশনের মাধ্যমেও গ্রামীণ এলাকার মানুষদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যে কী করে ঔষধি গাছের চাষ করতে হয় এবং বন ও পরিবেশ ধ্বংস না করে কী করে বনের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা ঔষধি গাছ ও বনজসম্পদ আহরণ করতে হয়।