প্লাস্টিক বর্জন করতে আরও কড়া সিদ্ধান্ত নিতে চায় ত্রিপুরা প্রশাসন

2 - মিনিট |

প্লাস্টিকের সমস্যা বিশ্বব্যাপী, স্থানীয়স্তরে এর সমাধান করতে হবে, বিধানসভায় ত্রিপুরার জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

প্লাস্টিকের সমস্যাতে ভুক্তভোগী সারা বিশ্ব৷ কিন্তু স্থানীয়স্তরে এর সমাধান করতে হবে৷ আজ বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয়ার্ধে বিধানসভার মুখ্যসচেতক কল্যাণী রায় আনীত ‘ত্রিপুরায় নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের তরফ থেকে আরও কঠোর এবং সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে’ এক দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশের জবাবে এভাবেই সমস্যা সমাধানে দিশা দেখালেন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা৷ তাঁর কথায়, প্লাস্টিক আবিষ্কার বিজ্ঞানের অন্যতম দান৷ কিন্তু এর বহুল ব্যবহারে আজ মানবসমাজ সমস্যার সম্মুখীন৷

জিষ্ণু দেববর্মা ত্রিপুরার বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও পরিবেশ দফতরের দায়িত্বেও রয়েছেন৷ তিনি বলেন, ২০১৫ থেকেই বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দফতরের পক্ষ থেকে সমগ্র ত্রিপুরায় প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ প্রস্তুত, আমদানি, রফতানি, মজুত, বিক্রয় ও ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ দফতরের অধিকর্তা, ত্রিপুরা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্যসচিব, জেলাশাসকগণ, জেলার পুলিশ সুপারগণ, মুখ্য কার্যনিবাহী আধিকারিক (আরবান লোকাল বডি এবং টিটিএএডিসি), খাদ্য ও গণবণ্টন দফতরের অধিকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দফতরের অধিকর্তা, সকল মহকুমাশাসক-সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতর এই আদেশ বলবৎ করার দায়িত্বে রয়েছেন৷

তিনি জানান, ২০১৮ সালে ত্রিপুরা সরকার প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বিক্রয়, মজুত ও রফতানিকারীদের জরিমানা পূর্বনির্ধারিত পরিমাণ থেকে বৃদ্ধি করে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা, সর্বোচ্চ ৩,০০০ টাকা এবং ব্যবহারকারীদের ১০০ টাকা ধার্য করেছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধি, ২০১৬-কে কার্যকর করতে নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধানসচিবের সভাপতিত্বে রাজ্যস্তরীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা বলবত করার লক্ষ্যে প্রতিটি জেলায় জেলাশাসকগণের সভাপতিত্বে গঠন করা হয়েছে জেলাস্তরের তদারকি কমিটি৷ তিনি বলেন, রাজ্যের প্রায় প্রতিটি বাজার কমিটির সাথেই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পর্যায়ক্রমে আলোচনা সভা করা হচ্ছে৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতর ও আধিকারিকগণের উদ্যোগে ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন বাজারগুলিতে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং প্রায় ২.৪৩ লক্ষ টাকা জরিমানা হিসেবে আদায় করা হয়েছে৷

তিনি বলেন, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হচ্ছে৷ রাজ্যে প্রায় ১,১০০ ইকোক্লাবের ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার না করার জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলছে৷ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমেও পথনাটিকা ও অন্যান্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে৷ বিভিন্ন স্ব-সহায়ক দলের প্রতিনিধিদের সাথে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিকল্প হিসেবে কাগজের ঠোঙা ও চটের ব্যাগ তৈরির প্রশিক্ষণ বিষয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে৷

তাঁর মতে, রাজ্যে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷ ক্যারিব্যাগের বিরুদ্ধে কার্যকরী অভিযান, জনগণকে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের আইনি বিধান সম্পর্কে অভিহিত করা এবং সমগ্র রাজ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ২০১৬ বিধানকে সম্পর্ণরূপে কার্যকরী করতে হবে৷ জেলাশাসকের সভাপতিত্বে গঠিত প্রতিটি জেলাস্তরীয় কমিটিকে এই বিষয়ে সমন্বয় স্থাপন, কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷ তিনি বলেন, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ সম্পর্ণ নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপকে কার্যকরী করার জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক কর ও চেকপোস্টের পাশাপাশি ইন্দো-বাংলাদেশ এবং অন্যান্য স্থানে প্লাস্টিক আমদানির ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে৷ তিনি আরও বলেন, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের বিকল্প হিসেবে কাপড়ের ব্যাগ, পাটের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করতে হবে এবং বিভিন্ন স্ব-সহায়ক দল, সেচ্ছাসেবী সংস্থাকে নিয়ে এই সব উপকরণ বাজারে যাতে সহজ লভ্য হয় সেই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে৷ রাজ্যের সবগুলি ইকোক্লাবকে এক্ষেত্রে আরও সদর্থক ভূমিকা নিতে হবে৷ ছাত্রছাত্রীদের প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য উৎসাহ প্রদান করতে হবে৷

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news