উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরের দামছড়ায় জনতা দরবার অনুষ্ঠান শেষে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই অভিমত ব্যক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব
ত্রিপুরাবাসীর মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। সমষ্টিগত উন্নয়নের কথা ভাবছেন রাজ্যের সাধারণ মানুষ। উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরের দামছড়ায় জনতা দরবার অনুষ্ঠান শেষে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এই অভিমত ব্যক্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তাঁর কথায়, রাজধানীতে বসে রাজনীতি করতে চাই না। ত্রিপুরার প্রত্যেক জনগনের কাছে পৌঁছাতে চাই আমি। কারণ, ত্রিপুরাবাসীর মানসিকতায় পরিবর্তন আমাকেও তাঁদের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বাড়িয়েছে।
নির্বাচন-সহ বিভিন্ন কারণে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে সোমবার থেকে শুরু হয় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর জনতা দরবার। এদিন জনতা দরবার অনুষ্ঠিত হয়েছে উত্তর ত্রিপুরা জেলার কাঞ্চনপুরে অবস্থিত দামছড়া কমিউনিটি হল-এ। বেশ কিছুদিন ধরেই জনতা দরবারকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা চলছিল ওই এলাকায়। দলমত নির্বিশেষে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সমস্যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সে অনুযায়ী সোমবার অনুষ্ঠিত জনতা দরবারে বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা নিজেদের অভাব-অভিযোগ তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে।
সাধারণ মানুষের কথা শোনার জন্য প্রশাসনিক শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে দামছড়ায় উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তিনি সবার কথা শোনেন এবং এক মাসের মধ্যেই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। বাকি যে সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য সমীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মূলত, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন সিংহভাগ জনজাতি অংশের লোকজন। কেউ বলছিলেন স্কুলের কথা, আবার কেউ চিকিৎসা পরিষেবার দাবি তুলে ধরেছেন। আবার অনেকে রাস্তাঘাট, প্রশাসনিক পরিকাঠামো ইত্যাদির কথাও বলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, জনতা দরবারের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে রাজ্যবাসীর মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে। তাঁর দাবি, এদিন সমস্যা সমাধানের জন্য কোনও রাজনৈতিক নেতা সেই অর্থে আসেননি। বরং সাধারণ মানুষ এসেছেন। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশই জনজাতি অংশের।
এদিন জনতা দরবারের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনার পর, ছোটখাটো সমস্যা স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকদেরই সমাধান করে দেওয়ার জন্য বলেন তিনি। পঞ্চায়েতসচিব থেকে শুরু করে মুখ্যসচিবকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে যেখানেই দায়িত্বে আছেন, সেখানেই যেন সংশ্লিষ্টরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। প্রশাসনিক আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, যেখানেই থাকবেন, “ত্রিপুরা নির্মাণের কাজ করবেন”।
জনতা দরবার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ এখন সমাজের সার্বিক কল্যাণের কথা ভাবছেন। জনতা দরবারে উপস্থিত হয়ে মানুষের উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে এই দাবি করেন তিনি।
বিরোধীদের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি এ জায়গায় এসে কারোর কাছ থেকেই শোনেননি যে তাঁরা কেউ খেতে পাচ্ছেন না। রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকায় না গিয়ে, সত্যের মুখোমুখি না হয়ে, আগরতলায় বসে রাজনীতি করার ফলেই এ-ধরনের অভিযোগ করে থাকেন বিরোধীরা। রাজ্যের জনজাতি অংশের মানুষের কাছে গিয়ে আসল সত্য জানার জন্য বিরোধীদের প্রতি আহ্বান রাখেন বিপ্লব দেব। এদিন তাঁর সাথে ছিলেন বিধানসভার উপাধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন-সহ অন্যরা। এদিকে, জনতা দরবার শেষে মুখ্যমন্ত্রী সবার সঙ্গেই বসে দুপুরের আহার গ্রহণ করেছেন আজ। মুখ্যমন্ত্রী খাবেন বলে আগে থেকেই রাজকীয় আয়োজন না করার জন্য বলা ছিল। তাই সংশ্লিষ্ট আধিকারিক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে বসে কালাপাতায় পরিবেশিত খিচুড়ি খেয়েই দুপুরের আহার সারেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অনুযায়ী প্লাস্টিকের ব্যবহারও এদিন করা হয়নি। গোটা আয়োজনই ছিল প্লাস্টিকমুক্ত।