স্মৃতি ইরানির ট্যুইটে মজে খুশির আবহাওয়া তাঁতমহলে

2 - মিনিট |

কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে খুশি বাঁশশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরাও। নতুন রাজ্য সরকার বাঁশ-বেতের শিল্পকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান আগরতলার ইন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা বাঁশ-বেত শিল্পী রুণা বেগম

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

ভারত সরকারের বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানির এক ট্যুইটে খুশির আমেজ সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যের তাঁতশিল্পী মহলে। স্মৃতি লিখেছেন, ত্রিপুরার ৩,৪৫০ জন যুবক-যুবতীকে পোশাক তৈরি ও বস্ত্রশিল্প এবং হস্তচালিত তাঁত, হস্তশিল্প এবং কার্পেট তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং ত্রিপুরা সরকারের যৌথ উদ্যোগে “সমর্থ” প্রকল্পের অধীনে এই প্রশিক্ষণ কার্য্য শুরু হবে। 
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির টুইটের খবর ছড়িয়ে পড়লে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে রাজ্যের মৃতপ্রায় হস্ততাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত সাধারণ মানুষ। এক সময় ত্রিপুরা জুড়ে হস্ত তাঁতশিল্পের রমরমা ছিল। রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলায় তাঁতিদের দেখা যেত। কিন্তু এখন যন্ত্রচালিত তাঁতের কারণে হস্তচালিত তাঁতের বেহাল অবস্থা। তবে এখনও সবচেয়ে বেশি তাঁতি রয়েছেন পশ্চিম জেলার মোহনপুর মহকুমার অন্তর্গত তারাপুর গ্রামে। এখানে এখনও প্রায় ২০০ পরিবারের মতো তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন। এঁদের প্রায় সকলেই দেবনাথ সম্প্রদায়ের মানুষ এবং পূর্বপুরুষ থেকে বংশ পরম্পরায় তাঁরা এই পেশায় যুক্ত।
তারাপুরের তাঁতশিল্পীদের কাছেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ট্যুইটের খবর এসেছে। তাঁতশিল্পী প্রতিভা দেবনাথ, সজল দেবনাথ-সহ প্রায় সকলের মুখে একই কথা, আগে তাদের দিন ভালোই কেটেছে। কারণ কাজের এত চাপ থাকত যে রাত-দিন কাজ করতে হত। গ্রামে ঢোকার আগে থেকেই ঠক ঠক আওয়াজ পাওয়া যেত।

এখন রাত-দিন তো দূর, সপ্তাহের সাত দিনও কাজ থাকে না। যন্ত্রচালিত তাঁতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হস্তচালিত তাঁত হেরে গিয়েছে। যে কাপড় হস্তচালিত যন্ত্রে তৈরি করা হত, তাতে তিন দিন সময় লাগে। এখন স্পিনিং মেশিন তা একঘণ্টার কম সময়ে করে দিচ্ছে। তাই ধুতি, শাড়ি-সহ অন্যান্য কাপড়ের চাহিদা প্রায় নেই। তবে এখনও জনজাতিদের রিশা পাছরার কিছুটা চাহিদা রয়েছে। তাই হস্তচালিত তাঁতে এই সকল সামগ্রী তাঁরা তৈরি করে পরিবার পরিচালনা করেন। যদি সরকার তাঁতে কাপড় তৈরি ও বিক্রির জন্য সহযোগিতা তবে তাঁদের দুঃখ কিছুটা ঘুচবে। 
অপর দিকে জনজাতি তাঁতিদের অবস্থা কিছু ভালো। কারণ তাদের তৈরি কাপড়ের চাহিদা অনেকটাই রয়েছে। যদিও জনজাতি অংশের মানুষ এখন নিত্যদিন তাঁদের পরম্পরাগত পোশাক পরে না, তাঁরাও এখন আধুনিক পোশাকে অভ্যস্ত। তবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজেদের পরম্পরাগত পোশাক পরে অংশ নেন। এমন-কি এখন ভিন্ন জাতীর মানুষও মানুষও শখে জনজাতিদের পরম্পরাগত কাপড় পরেন বলে জানান পশ্চিম জেলার জিরানিয়া মহকুমার মান্দাই এলাকার বাসিন্দা চারুলতা দেববর্মা। তবে তিনি জানান, আগে জনজাতি গ্রামীণ এলাকার ঘরে ঘরে তাঁতের কাপড় তৈরি করলেও এখন তাঁর পাড়ায় তিনি এবং অন্য কয়েকজন মহিলা তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। 
তবে তাঁতিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তাতেও খুশি তাঁরা। তবে এখন দেখার বিষয় সরকারের এই উদ্যোগে ত্রিপুরা মৃতপ্রায় তাঁতশিল্প আবার পুররুজ্জীবিত হয় কিনা। 
একইভাবে খুশি বাঁশশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা। তাঁদের আশা, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে তাদের শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে। নতুন রাজ্য সরকার বাঁশ-বেতের শিল্পকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান আগরতলার ইন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা বাঁশ বেত শিল্পী রুণা বেগম।   

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news