সদ্যজাত কন্যার পিতা কে? দাবিদার তিন

2 - মিনিট |

মুখে কুলুপ এঁটেছেন মা, রীতিমতো বিভ্রান্ত আইরিস কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

বাস্তব জীবনে ফেলুদা, ব্যোমকেশ বক্সি বা কিরীটি রায়ের মতো গোয়েন্দার থাকলে তাঁদের মগজাস্ত্র শানানোর জন্য একটি জটিল কেস পেতে পারেতন। সদ্য জন্ম নেওয়া এক কন্যা সন্তানের পিতৃত্বের দাবি জানিয়ে প্রমাণসহ হাসপাতালে হাজির তিন ব্যক্তি। মাথা খাটিয়েও কূল কিনারা পাচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশও। ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু দক্ষিণ কলকাতার আইরিস হাসপাতাল।

এর আগে একই শিশুর মাতৃত্বের দাবি জানিয়ে দুই মহিলার আবেদনের ঘটনা বেশ কয়েকবার সংবাদপপত্রের শিরোনামে এসেছে। তবে নবজাতকের পিতা হিসাবে একাধিক ব্যক্তির আবেদনের ঘটনা স্মরণাতীত কালে শোনা যায়নি। এবার সেরকমই বিরলতম ঘটনার সাক্ষী হল দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগানের একটি বেসরকারি হাসপাতাল।সেখানে নবজাতকের পিতা হিসাবে হাজির তিন ব্যক্তি। প্রত্যেকেরই দাবি, এই নাবজাতক তাঁরই সন্তান।

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার বিকেলে।হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ২১ বছরের স্বপ্না মিত্রকে নিয়ে গাঙ্গুলিবাগানের আইরিস হাসপাতালে উপস্থিত হনস্থানীয় রবীন্দ্রপল্লির বাসিন্দাদীপঙ্কর পাল। গর্ভবতী স্বপ্নাকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময় নিজের পরিচয় দেন ঐ যুবতীর স্বামী হিসাবে। এরপর রবিবার সকালে অস্ত্রোপচারের পর স্বপ্নার কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হলে নবজাতকের বাবা হিসাবে একে একে হাজির হন দীপঙ্কর ছাড়াও আরও দুই ব্যক্তি।আর এই নিয়েই রীতিমতো চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়ে যায় হাসপাতাল প্রাঙ্গনে। অবস্থা সামাল দিতে রীতমতো সমস্যায় পড়তে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কোনাও সমাধান সূত্র না মেলায় বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে আইরিস হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ।

এদিক, রবিবার সকালে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হন নিউটাউনের ভিস্তা গার্ডেনের বাসিন্দা হর্ষ ছেত্রি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি বলেন, ওই সন্তান তাঁরই ঔরসজাত। এই খবর শুনে যেন আকাশ থেকে পড়েন হাসপাতালের কর্মীবৃন্দ শুরু হয় বিভ্রান্তি।সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেয়েকে নিয়ে স্বপ্নার ভর্তি থাকা ঘরের নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশে।

ইতিমধ্যেই অবশ্য নেতাজিনগর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়েক করে ফেলেছেন হর্ষ। পুলিশের তরফে ফোন করা হয় হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এ বিষয়ে তারা কোনও সিদ্ধান্ত নেবে না।পুলিশ যা বলবে তাই করা হবে। তারা শুধু চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়গুলিই দেখবেন। কে আসল বাবা তা ঠিক করবে পুলিশ। রবিবার পুলিশ হর্ষ বা দীপঙ্কর- কাউকেই ঢুকতে দেয়নি হাসপাতালে। জানিয়ে দেওয়া হয়, এই মুহূর্তে স্বপ্না খুবই দুর্বল। তিনি সুস্থ হয়ে ওঠার পর কথা বলা যাবে তাঁর সঙ্গে।

সোমবার সকালে ফের নেতাজিনগর থানার পুলিশ নিয়ে হাসপাতালে আসেন হর্ষ। তিনি এসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাঁর ও স্বপ্নার ম্যারেজ সার্টিফিকেট দেখান। হর্ষ বলেন, “আমি আমার বিবাহের সংশাপত্র দেখিয়েছি পুলিশকে। স্বপ্না আমার বিবাহিত স্ত্রী। সেখানে অন্য কারও স্বামী হিসাবে উপস্থিতি কীভাবে সম্ভব, আমি বুঝতেই পারছি না। প্রয়োজনে আমি আরও প্রামাণ্য নথি দেব।”

এদিকে দীপঙ্কর স্বপ্নার মাকে নিয়ে সোমবার হাসপাতালে হাজির হয়ে বলেন, তাঁর কাছেও নাকি প্রামাণ্য নথি রয়েছে। যা দিয়ে সহজেই তিনি প্রমাণ করে দিতে পারবেন, স্বপ্না আসলে তাঁরই স্ত্রী।জানান, তাঁর কাছেও কাগজ রয়েছে।

বিষয়টা লালমোহন বাবুর ভাষ্য অনুযায়ী “হাইলি সাশপিশিয়াস” হয়ে ওঠে পিতৃত্বের দাবিদার হিসাবে তৃতীয় ব্যক্তির আগমনে। কাহিনী আরও রহস্যঘন হয়ে ওঠে যখন সোমবার সন্ধেবেলা প্রদীপ রায় বলে এক ব্যক্তি এসে দাবি করেন, তিনি ওই সন্তানের বাবা। মঙ্গলবার তিনিও লোক নিয়ে আসবেন বলে বেরিয়ে যান।

তবে এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ঘটনার মূল চরিত্র স্বপ্না ও তাঁর মা।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের সামনে তাঁরা কোনও মন্তব্যই করেননি। সব মিলিয়ে আতান্তরে পড়েছে হাসপাতাল। পুলিশ জানিয়েছে, স্বপ্না সুস্থ হয়ে উঠলে তারপরেই এই ঘটনার কিনারা করা সম্ভব হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related news