১ এমনি করে যায় যদি দিন যাক না বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলাম বিবলসে এসে। না, তিনশ বা চারশ বছর নয়। কম করেও সাত হাজার বছরের প্রাচীন শহর এই বিবলস। অনন্তকাল ধরে ফল্গুধারার মত বয়ে চলছে এখানকার জীবন। লেবানিজ উচ্চারণে জুবে। গ্রিক নাম বিবলস। শহরের এবং এখানকার দ্রষ্টব্যের কথায় আসছি। তার আগে পাঠকদের কাছে পরিচয় […]
১
এমনি করে যায় যদি দিন যাক না
বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলাম বিবলসে এসে। না, তিনশ বা চারশ বছর নয়। কম করেও সাত হাজার বছরের প্রাচীন শহর এই বিবলস। অনন্তকাল ধরে ফল্গুধারার মত বয়ে চলছে এখানকার জীবন। লেবানিজ উচ্চারণে জুবে। গ্রিক নাম বিবলস।
শহরের এবং এখানকার দ্রষ্টব্যের কথায় আসছি। তার আগে পাঠকদের কাছে পরিচয় দিতে চাইছি সফরের দেশটার। ভূমধ্যসাগরের তীরে একদিকে সিরিয়া, আর একদিকে ইস্রায়েল। মাঝে ছোট্ট এখটা ভূখন্ড লেবানন। এটি একটি প্রজাতান্ত্রিক দেশ। ক্রিশ্টান এবং মুসলিম যুগ্মভাবে এই দেশ শাসন করছে। ৩০ শতাংশ ক্রিশ্টান এবং ৭০ শতাংশ মুসলিম— তাই প্রায় ১৬ বছর ধরে এদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকত। কোনও স্থিতিশীল সরকার গড়ে ওঠেনি।
আতঙ্কবাদীদের বোমাবর্ষণ ও ইসলামী উগ্রপন্থীদের বিদেশী অপহরণ ১৯৮০-র দশকে ছিল নিত্যকার ঘটনা। এখানকার ভাষা আরবিক, ফরাসি এবং ইংরেজি। অধিবাসীর মধ্যে আছেন বেশ কিছু ইহুদি। মুদ্রা লেবানিজ পাউন্ড। শিক্ষার হার ৯০ শতাংশ। অলিভ, শষ্য এবং ফল প্রচুর উৎপন্ন হয়। শিল্প বলতে নানা রকম খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ভোজ্য তেল ছাড়াও বস্ত্র উৎপাদন, রাসায়নিক এবং সিমেন্ট তৈরির কারখানা।
২০১৮-র ২৪ জুলাই রওনা হলাম লেবানন, সাইপ্রাস, মাল্টা দেখব বলে। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে বিমান উড়ল কলকাতা থেকে। এমিরেটস-এর বিমানে যাচ্ছি। তাই দুবাইতে বিমান বদল করতে হল। প্রথমে লেবানন। বেইরুটে যখন এলাম, তখন সন্ধ্যা সওয়া ছ’টা। দূরত্বের কারণে সময়ের এই পার্থক্য। হোটেলে পোঁছে ফ্রেশ হয়ে রাতে খাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়লাম।
বিবলস
বিবলসে এসে অন্য রকম পরিবেশ স্বাভাবিকভাবেই আকৃষ্ট করল আমাদের। ইউনেস্কো এটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রচুর ভগ্নাবশেষ আছে এ শহরে। সুদূর অতীতে হারিয়ে যায় মন। গাছের ছায়ায় বসে চিত্রার্পিতের মত তাকিয়ে ছিলাম এক অতীতের কীর্তির দিকে। ডাক পড়ল ট্যুর লিডারের— চলুন এ বার অন্য জায়গায় যেতে হবে।
অন্য কোথা, অন্য কোনওখানে। এবার চলেছি হরিষায়। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ মিটার উঁচুতে। একদিকে সমুদ্র। আর একদিকে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আমরা চলেছি। রাস্তার দু’দিকে কখনও সুন্দর গাছের সারি। যত ওপরের দিকে উঠছি, ততই যেন সুন্দর লাগছে শহরটাকে।
হরিষা একটা পবিত্র স্থান। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ভার্জিন মেরির মূর্তি। এখানে আমরা ক্যাথিড্রাল দেখলাম। পাহাড়ের ওপর মনোরম পরিবেশে আমাদের সবার মন খুশ। এই বার আমাদের গন্তব্য জেইটা গ্রোটো। বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য স্থান হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছিল এটি।
প্রথম গ্রোটো দেখেছিলাম স্কটল্যান্ডের উত্তর সাগরের তীরে। তখন শুনেছিলাম পাহাড়ের গুহায় জলদস্যুরা লুঠের সামগ্রি লুকিয়ে রাখত। এর পরে অনেক গ্রোটো দেখেছি। বুঝেছি, এগুলি আসলে পাহাড়ের গুহা। এক একটা জায়গায় এক এক রকমের। এখানে, মানে জেইটায় দেখলাম চুনা পাথরের পাহাড়ের পেটে বিশাল, প্রশস্ত গুহা। ওপর থেকে খাঁজে খাঁজে জল চুঁইয়ে পড়ে তৈরি করছে নানা রকম অবয়ব। এখানে ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
জেইটা গ্রোটো থেকে শহর অনেকটা নীচে। নামার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। প্রথমে একটি গাড়ি লাইনের ওপর দিয়ে খানিকটা নামালো। তার পর কেবল কারে চড়ে একদম নীচে। এখান থেকে নির্দিষ্ট গাড়ি করে হোটেলে ফেরা। একটা অন্য রকম অনুভূতি। চোখের পলকে হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের ওপরের সবুজ গাছের সারি।
২৬শে জলখাবারের পর্ব সেরে সবাই উঠে পড়লাম নির্দিষ্ট বাসে। বেলা সাড়ে দশটা। যেতে যেতে রাস্তার নামফলক লক্ষ্য করছি। কোনওটা ব্রিটিশ সামরিক অফিসারের নামে। কোনওটা বা চিহ্ণিত হয়েছে ফরাসি কোনও সেনানায়কের নামে। একটা পাব্লিক বাস স্টেশন চোখে পড়ল। বন্দর এলাকার পাশ দিয়ে যাচ্ছি। কত জাহাজ তীরে নোঙর করে আছে! খুব সুন্দর অঞ্চলটা। রাস্তার মাঝে লেবানিজ অভিবাসীর মূর্তি।
চারপাশ পরিস্কার। কোথাও কোথাও দেশের জাতীয় পতাকা উড়ছে। পতাকার দু’দিক লাল, মাঝখানটা সাদাসাদার মধ্যে সবুজ সিডার গাছের ছবি। সিডার এখানকার জাতীয় গাছ। বুলেভার্ডগুলো ফুলগাছে ভর্তি। কী বাহার তাতে! গাঢ় রঙের করবী, জবা, কলাবতী। এক ঘন্টার ওপর হয়ে গেল ভূমধ্যসাগরকে বাঁদিকে রেখে চলেছি। নীল জলরাশি সূর্যের রশ্মিতে ঝকঝক করছে। আর মাঝে মাঝে স্পিডবোট চলেছে জল কেটে। পাশে পাহাড়। এগুলো বেশির ভাগই চুনাপাথরের।
লেবাননে পাঁচটা প্রদেশ। প্রত্যেক প্রদেশের প্রবেশপথে চেক পোষ্ট। এবার দেখলাম সমুদ্রতীরে অনেক বাড়িঘর। অপর পাড়ে পাহাড়ের ধাপে ধাপে ঘরবাড়ি। একটা প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ অতিক্রম করলাম। একটা কারখানা দেখিয়ে গাইড বললেন, ওটা মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সিমেন্টের উৎপাদনকেন্দ্র।
লেবানিজদের প্রত্যেকের বাড়িতে তিনটি করে খিলান। যেতে যেতে গাইডের মুখে জানছি নানা কথা। লেবাননে অভিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অষ্ট্রেলিয়। প্রচুর অলিভ হয় এখানে। তা থেকে তৈরি তেল এবং পানীয় খুব বিখ্যাত।
একটা গির্জা চোখে পড়ল। সেন্ট জনের নামে চিহ্ণিত। পেল্লাই উঁচু। গায়ে খোপ খোপ করা জানলার মত। শুনলাম বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে এগুলি ছিল সমাধিস্থল। পাহাড়ের ওপর ৭০০ মিটার ওঠা হয়ে গিয়েছে। আশপাশে শুধু সিডার আর সিডার। এ রকম বিখ্যাত গাছ পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
এবারের গন্তব্য বেসরা। দেখব খলিল গিবরানের জন্মস্থান এবং সংগ্রহশালা। পৃথিবী বিখ্যাত এই কবি-সাহিত্যিক-চিত্রশিল্পীর জন্ম লেবাননে। পরিবারের সঙ্গে পরে পাকাপাকিভাবে চলে আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পারদর্শী হয়ে ওঠেন ইংরেজি ও আরবি ভাষায়। আরব দুনিয়া তাঁকে ‘বিদ্রোহী‘ কবি এবং রাজনীতিক হিসাবে শ্রদ্ধা করে। আজও তাঁকে লেবানিজরা আরব সাহিত্য জগতের আদর্শ পুরুষের মান্যতা দেন। খলিল গিবরানের ‘দি প্রফেট’ ১৯২৩-এ ইংরেজি সাহিত্যে আলোড়ণ ফেলে দেয়। বেস্ট সেলারের নিরিখে বিশ্বে তাঁর স্থান তৃতীয়। উইলিয়ম শেক্সপিয়র এবং লাও ৎসুর পর।
সংগ্রহশালা দেখে আমরা চলেছি সিডারের জঙ্গলে। রাস্তার দু’ধারে আপেলের বাগান। গাছে গাছে ঝুলছে সবুজ আপেল। নভেম্বর থেকে জুন পাহাড় বরফে ঢাকা থাকে। তাই এর নাম হোয়াইট হিলস। এখানে বহু লোক স্কী করতে আসেন। বাস থেকে নেমে জঙ্গলের মধ্যে উঁচুনিচু অসমান পথে অনেকটা গেলাম। না হলে তো গাছগুলিকে জানা হত না!
এখানকার সিডারগুলো প্রায় দু‘হাজার মিটার উঁচু। বয়স নাকি প্রায় চার হাজার বছর। ৯০০ বছর হলে গাছ চওড়া হয়। বরফে ঢেকে থাকার সময়ে বীজ থেকে আপনা আপনি গাছ জন্মায়। খুব ভালভাবে এখানে বৃক্ষ সংরক্ষণ হয়। জঙ্গল দেখে আবার আমরা বাসে উঠে বসলাম। গাড়ি থামল কোজাহাইয়া উপত্যকায় সেন্ট অ্যান্টনী মনাস্ট্রির সামনে।
পাহাড় কেটে তৈরি হয়েছে এই উপাসনাস্থল। প্রচুর সময় লাগল এটা ঘুরে দেখতে। এর অর্ধেকটা প্রকৃতির তৈরি। বাকি অর্ধেকটা মনুষ্যসৃষ্ট। একটা অভিনবত্ব আছে। উপত্যকাটাও খুব সুন্দর। প্রঅকৃতিক দৃশ্য অনির্বচনী। এর পর ফিরে এলাম রাজধানী বেইরুটে।
চলেছি পূর্ব লেবাননের বেক্কা উপত্যকায় অবস্থিত বালবেক শহর দেখতে। ১৫০০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছোলাম। এর পিছনে সিরিয়া। এই উপত্যকার জমি খুব উর্বর। প্রচুর ফল উৎপন্ন হয়। বালবেক হচ্ছে মন্দিরের শহর। মন্দিরগুলি তৈরির সময়ে পাহাড় কেটে পাথর নেওয়া হয়েছিল। একটা পরিত্যক্ত প্রস্তরখন্ড দেখিয়ে গাইড বললেন, এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রস্তরখন্ড।
৬১ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি হয়েছিল ভেনাস টেম্পল। পরে ধ্বংস হয়ে যায়। সেটি দেখার পর দেখলাম জুপিটার টেম্পলের ধ্বংসাবশেষ। বিশাল চত্বর। দু’ধারে বিভিন্ন রঙের গ্র্যানাইটে তৈরি মন্দির। রোমান স্থাপত্যে তৈরি বিশালাকারের স্তম্ভ। এত বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে ছড়িয়ে ধ্বংসাবশেষ যে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ঘরতে ঘুরতে যেন হারিয়ে যাচ্ছি। মার্বেল পাথরের কারুকাজ বেশ কিছু জায়গায় এখনও নিখুঁত।
এর পর এলাম ক্সারা গুহায়। অতীত কাল থেকে এই প্রাকৃতিক গুহায় মদের বোতল সংরক্ষিত হয়। অনুকূল আবহাওয়ায় পানীয়ের মান ভাল থাকে। এখানে পর্যটকদের এই পানীয়ের স্বাদ অনুভব করার সুযোগ দেওয়া হয়। এর পর গেলাম অষ্টম শতকে তৈরি আঞ্জার শহরে। এর ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছে সিল্ক রুট। শহরের ভিতর এখনও রাস্তাঘাট, তিনটে প্রাসাদ, দুটো স্নানাগার, মসজিদ প্রভৃতির নিদর্শন আছে। একটা বড় অংশ পুরাতাত্বিক গুরুত্বের জন্য সংরক্ষিত।
আঞ্জার শহরটা আর্মেনিয় অধ্যুষিত। স্থানীয় বেশিরভাগ গির্জায় আর্মেনিয় খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব দেখা যায়। ব্যবসা বানিজ্যের কেন্দ্রস্থলও ছিল এ শহর। পাহাড় পেরিয়ে সওদাগরেরা আসতেন। প্রচুর প্রাচীন দোকানের ভগ্নাংশ রয়েছে নানা জায়গায় ছড়িয়ে। রয়েছে সেকালের জনপদের সাক্ষ্য। অঞ্চলটা ভূমিকম্পপ্রবণ হওয়ায় বাড়িঘর তৈরি হত চুনাপাথর দিয়ে।
ফিরতি পথে আমরা অনেক কিছু দেখলাম। সমুদ্রের কাছে এসে খাড়ি থামলো ‘পিজিয়ন রক’-এর কাছে। কিছুক্ষণ সময় কাটালাম ওখানে। সমুদ্রতীরে পর্যটকদের জম্য তৈরি হয়েছে অসংখ্য রিসর্ট, সুইমিং পুল। এর পর আলোয় ঝলমল পথ ধরে ফিরলাম হোটেলে।
। । ২। ।
এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
এবারের গন্তব্য সাইপ্রাস। ২৮ জুলাই লেবাননকে বিদায় জানালাম। বেইরুট থেকে লাগল মিনিট পঁচিশ। লারনাকা বিমানবন্দর থেকে বাসে যাচ্ছি হোটেলে। পথের দু’ধারে রুক্ষ ধূ ধূ প্রান্তর। ইতশ্তত দেখা যাচ্ছে ধুলোমাখা পাইন গাছ। অসমতল প্রান্তরে ছোট ছোট টিলা। সকাল সাড়ে ছ’টায় বেড়িয়ে হোটেল পৌঁছোলাম ১০টা নাগাদ।
খুব সুন্দর হোটেল। সারা দিন আমরা যে যার মত কাটাব। আমরা মানে, জনা বাইশের দল। সবাই প্রায় কলকাতার। মহিলা জনা ছয়। সন্ধ্যা নাগাদ রুমমেট জয়শ্রীর সঙ্গে বেড়িয়ে পড়লাম সমুদ্রের ধারে। সঙ্গী হিসাবে পেলাম একটি ছেলেকে। বাড়ি পাঞ্জাবের পাতিয়ালায়। এখানে পড়তে এসেছে।
প্রথমে শুনেছিলাম বড়জোর মিনিট পঁচিশ হাঁটলে সৈকত। কিন্তু আধ ঘন্টা হাঁটার পর জানতে পারলাম আরও আধ ঘন্টা লাগবে সৈকতে পৌঁছোতে। আমি রাজি হলাম না। ছেলেটি কাছেই থাকে। ও চলে গেল। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে একটা লিফট পেলাম। এক গ্রিক ভদ্রলোক হোটেলে আমাদের নামিয়ে দিয়ে গেলেন। মুগ্ধ হলাম ওঁর আতিথেয়তায়।
একটু বিশ্রাম করে চলে গেলাম ডাইনিং হলে। ব্যুফে ডিনার, খুব সুন্দর ব্যবস্থা। বিশাল সাজানো হল। খুব মৃদু শব্দে সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা। নৈশাহারের পর গানের আসর। একটি মেয়ে নানা ভঙ্গী করে গান গাইতে গাইতে গানের অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছিল। কোথাও শালীনতার মাত্রা ছাড়ায়নি। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা সুইমিং পুলের ধারে এসে বসলাম। সুন্দর হাওয়া। শরীর যেন হারিয়ে যাচ্ছে। অমলিন আকাশে আধফালি বাঁকা চাঁদ।
পর দিন, মানে ২৯শে আমাদের গন্তব্য নিকোসিয়া। ঘোরার আগে একটু দেখে নিই দেশটার অআকখ-দিকে। সাইপ্রাসও ভূমধ্যসাগরের তীরে। পূর্ব দিকে, উত্তরপূর্ব কোণে ইওরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার মিলনস্থল। ১৯৭৪-এ তূর্কিরা আক্রমণ করে এই দেশ। এখনও কিছু অঞ্চল রয়ে গিয়েছে তূর্কিদের অধীনে। অনেক চেষ্টা করেও স্থানীয়রা ওঁদের সরাতে পারেনি।
সাইপ্রাস মূলত কৃষিপ্রধান। আলু, গাজর, আঙুর, প্রভৃতি এখানকার প্রধান কৃষিজাত দ্রব্য। শিক্ষিতের হার ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ। প্রধান ভাষা গ্রিক, তূর্কি, ইংরেজি। জনসংখ্যার ৭৮ শতাংশ গ্রিক অর্থোডক্স, ১৮ শতাংশ মুসলিম এবং ৪ শতাংশ অন্যান্য।
প্রাতঃরাশের পর বেড়িয়ে পড়লাম। প্রথমে দেখলাম প্রাচীন প্রাসাদ ‘বুইক খান‘। ’বুইক’ কথাটির অর্থ মহান। দ্বিতল বাড়ি। ৬৮টি ঘর। এখন এটি সাইপ্রাসের হস্তশিল্প বাজারে। দেখলাম সেন্ট সোফিয়া ক্যাথিড্রাল। এখানে লুসিকনান রাজাদের অভিষেক হত। পরে ১৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে লালা মুস্তাফা পাশা ক্যাথিড্রালটিকে মসজিদে রূপান্তরিত করেন। এখানেই শুক্রবারের প্রার্থনার প্রচলন হয়।
প্রধান দর্শনীয় ওল্ড লেফকোসিয়া প্রাচীরে ঘেরা। শুরু হয়েছিল লুসিগনান আমলে, শেষ হয় ভেনেসিয় আমলে। পুরো শহরটা এই প্রাচীরের মধ্যে। উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম— তিন দিকে তিনটি ফটক। পূবের ফটকটি বেশি বিখ্যাত। এর নাম ফামাগুস্তা। যাতায়তের জন্য এটাই ব্যবহৃত হয়। এখানকার পুরাতাত্বিক সংগ্রহশালাটি দেখার মত। নিওলিথিকাল আমল থেকে বাইজেন্টাইন যুগ পর্যন্ত সরেক সামগ্রি এখানে রয়েছে। এর পর দেখলাম আর্চ বিশপের প্রাসাদ ও যাজক সেন্ট জনের ক্যাথিড্রাল। এখানে অষ্টাদশ শতকের চিত্রকলায় আছে বাইবেলের নানা কাহিনীর ছবি।
সাইপ্রাসের রাজধানী এই নিকোসিয়া। ৪৮০ বছর ছিল ব্রিটিশদের অধীনে। বছর চার ধরে আন্দোলন চলার পর ১৯৫৯ সালে দেশ স্বাধীন হয়। কেবল কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে ব্রিটিশরা। মধ্যযুগ থেকে নিজস্ব পরিচিতি পায় নিকোসিয়া। অনেক সভ্যতার নিদর্শন বহণ করছে এই শহর। লুসিগনান‘ ভেনেসিয়ান, অটোমান এবং ব্রিটিশ— নানা সময়ে এই চার সভ্যতার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে নিকোসিয়া। শহরটির অন্য নাম লেফকোসিয়া।
তূর্কি অধিকৃত অঞ্চল দেখতে গেলাম। এখানে সীমানা পার হওয়ার সময় পাসপোর্ট দেখাতে হয়। সেই মত ভিতরে গেলাম।
৩০ জুলাই। আজ আমাদের গন্তব্য পাফোস। সমুদ্রের ধার দিয়ে যেতে যেতে পৌঁছে গেলাম পুরনো শহরে। এটা হ’ল কিউরিয়ান রাজত্বের রাজধানী। এখানে মোজাইকের কাজ রয়েছে সমাধিস্থলে। খোলা জায়গায় যুগ যুগ ধরে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মোজাইক। এখানে অ্যাক্রোপলিসে আছে সেকালের জল সরবরাহ ব্যবস্থা ও জলাধার।
এখানে এক সময় ছিল চারটি থিয়েটার হল। তৈরি হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে। গ্যালারি সমুদ্রের দিকে মুখ করা। সাউন্ড সিস্টেম খুব ভাল। দূর থেকে স্পষ্ট শোনা যায় সব কথা। ভূমিকম্পে ধ্বংশ হয়। রোমানরা ফের তৈরি করে। এর পর প্রায় দেড় কিলোমিটার হেঁটে গেলাম পাফোস আর্কিওলজিক্যাল সাইটে। এখানে রক্ষনাবেক্ষণ করা হচ্ছে মোজাইকের কাজগুলো। কী অসাধারণ চিত্রকলা! দেবী অ্যাক্রোডাইটের জন্ম সমুদ্রের ঢেউ থেকে। আর, এই জায়গাটাই সেই কাল্পনিক জন্মস্থান।
সেন্ট পলের স্তম্ভ দেখলাম। এখানে নাকি বেঁধে রাখা হয়েছিল সেন্ট পলকে। তাঁকে চাবুক মেরেছিল রোমানরা। এবার বাসে উঠে যেতে যেতে দেখলাম স্টেডিয়াম, ব্রিটিশ আমলে সাজানো বাড়ি। প্রত্যেক বাড়িতে ব্যালকনি। দূরে পিছনে পাহাড়। হ্যাপি ভ্যালি, ক্রিকেট-ফুটবল-হকি-রাগবি-গল্ফ-পোলো খেলার জায়গা।
সমুদ্রের তীরে ‘রক অফ রোমিও‘। অটোমানের সময়ে জেলখানা ছিল। দু’পাশে পাহাড়, মাঝে মাঝে সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়া রাস্তা। চমৎকার পরিবেশ। এর পর এলাম লারনাকা টুরিস্ট বিচে। সেখানে ভলিবল খেলা হচ্ছে। সমুদ্রতীরে প্রচুর ছাতা আর আরাম কেদারা। যার যেখানে ইচ্ছে বসে পড়ো। বহু লোক ব্যস্ত স্নানে। ছোট বাচ্চারা হইহই করছে। বালতি করে জল নিয়ে খেলছে। ভাললাগার একরাশ পরশ নিয়ে ফিরে এলাম হোটেলে।
৩১শে আমাদের গন্তব্য সাইপ্রাসের বিখ্যাত পর্বতমালা ট্রডস। দ্বীপের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯৫২ মিটার উঁচুতে। খুব আস্তে আস্তে গাড়ি উঠছে ওপরে। আড়াই ঘন্টার রাস্তা। প্রথমে ঘন্টাখানেক পর থামল। যাকে বলে কমফোর্ট ব্রেক। তার পর আবার যাত্রা শুরু। খানিকটা চলার পর একটা তামার খনি। ডান দিকে সমুদ্র। বাঁ দিকে কেবল অলিভ বাগান।
এবার নামকাকো পেত্রিয়া নামে একটি গ্রাম। দূরে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের প্রাচীর। কখনও পপলারের সবুজ সারি। কখনও বা লম্বা ঝাউগাছের মত বৃক্ষরাশি। এগুঢ়িকে বলে সাইপ্রাস ট্রি। পাহাড়ের ওপর দমকল। আগে নাকি এই পাহাড় ছিল রুক্ষ ও ধূসর। এখন সবুজে সবুজ তুমি নীলিমায় নীল। যেতে যেতে একটা জলাধার পড়ল। এখানে প্রচুর চেরি, আঙ্গুর, কিউই হয়।
কী সুন্দর গ্রাম! পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে বাড়ি। কাইকস মনাস্ট্রি দেখতে নামলাম বাস থেকে। ভার্জিন মেরির স্মরণে ধনী এবং ঐতিহ্যবাহী এই মনাস্ট্রি তৈরি হয় ১১০০ শতাব্দীতে। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যর অনেক নিদর্শন এখানকার সংগ্রহশালায়। সংরক্ষিত পেন্টিংগুলি অসম্ভব আকর্ষণীয়। কুমারি মাতা মেরির ছবি টার দিকে। সিলিংয়ে আঁকা ছবি দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।
হাঁটাপথে গেলাম গভীর জঙ্গলে আর্চ বিশপ ম্যাকারিওর সমাধি দেখতে। এর পর ওমোধোস গ্রামে। ছবির মত সুন্দর জনপদ। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কত গাছের সারি। যেন সবাক হয়ে উঠেছে ইজেলে শিল্পীর তুলি। এখানেও মনাস্ট্রি আছে। গোটা চত্বর পাথরে বাঁধানো। চারপাশে কাঠের কারুকাজ।
এখান থেকে আমরা গেলাম ওয়াইন ফ্যাক্টরিতে। টাটকা ফলের রস দিয়ে তৈরি পানীয়। আমাদের পরিবেশন করা হল স্বাদগ্রহণের জন্য। বিশাল টেবিলের চার পাশে বসে সফরসঙ্গীরা কেউ কেউ সুরপান করলেন। কেউ বা ওঁদের দিলেন নিছকই সঙ্গ। শেষ হল আমাদের সাইপ্রাস ভ্রমণ। কাল আমরা পাড়ি দেব অন্যত্র।
। । ৩। ।
পৃথিবীর পরে ওই নীলাকাশ
১ আগস্ট আমরা এলাম মাল্টায়। বিকেল হতে চলেছে। আজ যে যার মত সময় কাটানোর অনুমতি পেয়েছি। কোনও গ্রুপ ট্যুর নেই। কিন্তু উৎসাহকে তো চেপে রাখা যায় না! সাগর ডাকছে হাতছানি দিয়ে। রুমমেট জয়শ্রীকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সুন্দর শহর। সুভ্যেনিয়র বাস থেকে নানা রকম স্মারক বিক্রি হচ্ছে। সমুদ্রের ধারে অনেক বোট। পায়ে চলা পথের ওপর অনেক বেঞ্চ। যার যখন দরকার হচ্ছে জিরিয়ে নিচ্ছেন। কিছুক্ষণ এ সব দেখে ফিরে এলাম হোটেলে।
মধ্য ভূমধ্যসাগরের একটা দ্বীপ মাল্টা। সিসিলি থেকে দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার। আফ্রিকার উপকূল থেকে ২৯০ কিলোমিটার। গোমো এবং কোমিনো দ্বীপদুটো মাল্টার মধ্যে পড়ে। ১৯৬৪ সালে স্বাধীন হয় মাল্টা। ১৯৭৪-এ পরিণত হয় প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। ২০০৪ সালের ১ মে যোগ দেয় ইওরোপীয় ইউনিয়নে। এই পার্বত্য অঞ্চলে উপার্জনের জন্য পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। আয়ের মূল উপায় জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতি। গম, বার্লি, পেঁয়াজ, আলু, টমেটো প্রভৃতি প্রধান কৃষিজাত দ্রব্য।
২ আগস্ট সকাল ১০টায় আমরা হোটেল থেকে পায়ে হেঁটে এলাম জাহাজঘাটায়। নির্দিষ্ট জাহাজে জায়গা নিলাম। আমাদের ২২ জন ছাড়াও অন্য বেশ কিছু যাত্রী ছিলেন। যাত্রা শুরু হতেই হার্ড বা সফট ড্রিঙ্কস। নিখরচায় এই জলপান। তাই কারও ‘না‘ নেই। যার যা খুশি পান করো।
আমাদের জলযানটার নাম ‘ক্যাপ্টেন মোরোগান ক্রুজ‘। কিছুক্ষণ বাদে উপসাগর থেকে সাগরে এসে পড়লাম। কী সুন্দর পালতোলা নৌকো চলেছে পাশ দিয়ে। মাঝে মাঝে স্পিড বোট আমাদের কাটিয়ে সাঁ করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গন্তব্য গোজো দ্বীপ। সমুদ্রের জল অসম্ভব রকমের নীল। ওপরে মেঘমুক্ত নীলাকাশ। দেখতে দেখতে দু’ঘন্টা কেটে গেল।
গোজো দ্বীপে এসে মন ভরে গেলো। সুন্দর সাজানো দ্বীপ। বাড়িগুলো দোতলা, মেটে হলুদ রঙের। অনেক বাড়ি আবার সাজানো শ্বেত পাথরের মূর্তি দিয়ে। প্রতিটিতে ব্যালকনি। কেন্দ্রস্থলের নাম ভিক্টোরিয়া। বাসে করে ঘুরে ঘুরে দেখছি। দ্বীপটা খুব বড় নয়। পাহাড়ি রাস্তার দু‘পাশে সারি সারি বাড়ি। এখন খুব গরম। রাস্তা প্রায় জনশূণ্য।
‘টা‘ নামে একটি গির্জার সামনে নামলাম। বিশাল চত্বর বিভিন্ন মূর্তি এবং পেন্টিংস দিয়ে সাজানো। দেখলাম সৌন্দর্যায়নের এই কাজ চলছে। সিটাডেল দেখতে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে হল। ক্যাথিড্রালটা খুব সুন্দর। অনেকটা জায়গা নিয়ে তৈরি। প্রচুর লোক। একদম ওপরে মা মেরির মূর্তি। দূর্গের সামনে সারিবদ্ধভাবে বেশ কিছু কামান রাখা।
অনেক দূরে সমুদ্র দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের বেশ কিছুটা ওপরে আমরা দাঁড়িয়ে। তাই অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। শপিং সেন্টারের সামনে বাস রাখা হল। সবাই নেমে জিনিস দেখলাম। চোখ ভরে যায় দোকানগুলির সাজানো দেখলে। বিক্রি হচ্ছে মূলত লেসের কাজ। দেখার মত সূক্ষ কীর্তি। এখানে আর একটা কথা জানিয়ে রাখি। এঁদের আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন। শিক্ষার হার ৯২ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রধান ভাষা মাল্টিজ ও ইংরেজি। ৯৮ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক।
এবার আমরা যাচ্ছি কোমিনো দ্বীপের দিকে। এখানে ব্লু লেগুনে সমুদ্রস্নান করতে প্রচুর লোক আসে। প্রচুর লঞ্চ ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু আনন্দে জীবন ভরিয়ে নিতে এখানে আসা। স্নানের পোষাক পড়ে কী স্বচ্ছন্দে হাত ধরাধরি করে হেঁটে চলেছে। দর্শক হিসাবে আমরা ওদের আনন্দ ভাগ করে নিলাম। পাহাড়ের মাঝে মাঝে গুহা। ওপরে ওঠার জন্য রেলিং লাগানো রয়েছে। যে যতটা ওপরে পারছে উঠে জলে ঝাঁপ দিচ্ছে।
জলে শুধু মানুষ আর মানুষ। মনে হচ্ছে মাথার মালা গাঁথা হয়েছে। আর একদিকে দেখছি লঞ্চ থেকে স্লিপের সাহায্যে জলে পড়ছে। কী সুন্দর লাগছে! গাঢ় নীল জল। সুরের ঝঙ্কার তুলে সামনে দিয়ে বেড়িয়ে গেল একটা ময়ূরপঙ্খী। আমরা ফিরে এলাম আমাদের ক্রুজে।
৩ আগস্ট। আজ মাল্টায় আমাদের শেষ দিন। সকালে জিনিসপত্র গুছিয়ে হোটেলের স্টোর রুমে রেখে বেড়িয়ে পড়লাম। সারা দিন ঘুরে মাঝরাতে বিমান ধরতে হবে। এত গরম যে গাইড বারবার সবাইকে জল পানের পরামর্শ দিচ্ছেন। আমরা দেখতে গেলাম রাজধানী ভাল্লেটা।
এমনভাবে শহরটা তৈরি হয়েছে যাতে পায়ে হেঁটে নিশ্চিন্তে সবাই ঘুরতে পারেন। যানবাহনের প্রবেশ নিষেধ। যেমন সুন্দর সাজানো, তেমন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। পার্লামেন্ট ভবনের নকশা মনে রাখার মত। রাস্তার দু‘পাশ রঙিন ঝালর দিয়ে সাজানো। সারিবদ্ধ সাজানো দোকান। মন্ত্রীদের গাড়ির নম্বরপ্লেটে লেখা জিএম, মানে গভর্ণমেন্ট অফ মাল্টা। রাস্তার ধারে এক জন বসে অ্যাকোর্ডিয়ান বাজাচ্ছেন। কত লোক হাঁটছেন! ক্যাথিড্রালটাও খুব সুন্দর।
বিশাল প্রাসাদ গ্র্যান্ড মাস্টার্স প্যালেস। অনেক রকমের মূর্তি। সিলিংয়ে দুর্ধর্ষ কাজ। ১৯৬৪-তে স্বাধীন হয় মাল্টা। স্বাধীনতার সৌধের সামনে দাঁড়িয়ে সবাই ছবি তুললাম। এলাম কুইন্স স্কোয়্যারে। ঝর্ণা-সহ সুন্দর, সাজানো একটি বাগান। এত সুন্দর, ভাষা হারিয়ে ফেলছি।
এবার যাচ্ছি ব্লু গ্রোটোর দিকে। এখন সওয়া দু‘টো বাজে। সমুদ্রের ধারে বসে কিছু খেয়ে নিলাম। এবার ঢাল বেয়ে নিচে নেমে ছোট ছোট স্পিড বোটে উঠলাম। জলের মধ্যে মাথা উঁচু করে আছে পাহাড়। আর, সে সবে নানা আকারের গুহা। জলের আঘাতে পাহাড়ের পাথর ক্ষয়ে নানা রকম অবয়ব তৈরি করছে। পাহাড়ের সুড়ঙ্গ দিয়ে যখন যাচ্ছি, কী অন্ধকার! কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আস্তে আস্তে যখন বেড়িয়ে আসছি, দূরে দেখা আলোর আভা আমাদের সত্যি পুলকিত করে তুলল। একটা অবর্ণনীয় অনুভূতি।
এক ঘন্টা এইভাবে পাহাড়-গুহা-জলে ঘুরে বেড়ালাম। দেখলাম অসংখ্য মানুষের সমুদ্রস্নান। এখানে জানিয়ে রাখি ব্র্যাড পিটের ’ট্রয়’ ছবির শুটিং এখানেই হয়েছিল। এর পর আমরা এলাম মৎস্যজীবীদের গ্রামে। খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতকে ফিনিশিয়ানরা প্রথমে এখানে আসেন। মাছ ধরার প্রচুর নৌকো আছে এখানে। এগুলোকে বলে ‘মাল্টিজ বোট’। সামুদ্রিক মাছের অনেক দোকান আছে। রয়েছে সামুদ্রিক খাদ্যের দোকানও।
এবার গন্তব্য পুরনো রাজধানী মদিনায়। শহরটা তাম্রযুগের সাক্ষ্য বহন করছে। খুব শান্ত, ছোট্ট শহর। রাস্তায় হেঁটে আমরা অনুভব করার চেষ্টা করলাম এর অতীতকে। জগতে আনন্দযজ্ঞে তোমার নিমন্ত্রণ।