আইআইএসএফ-এর সমাবেশে আলোচনায় জ্যোতির্বিজ্ঞানীর মহাকাশসফর

2 - মিনিট |

ভারতের বিভিন্ন স্পেস প্রোগ্রাম কতটা সফল, কেন পড়বেন অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ভবিষ্যতই বা কী, আইআইএসএফ-এর সমাবেশে আলোচনায় মহাকাশ সফর করালেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী দেবীপ্রসাদ দুয়ারী

কে আর সি টাইমস ডেস্ক

ভারতের বিভিন্ন স্পেস প্রোগ্রাম কতটা সফল, কেন পড়বেন অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, ভবিষ্যতই বা কী, আইআইএসএফ-এর সমাবেশে আলোচনায় মহাকাশ সফর করালেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী দেবীপ্রসাদ দুয়ারী। 

 বিড়লা তারামণ্ডলের বর্তমান ডিরেক্টর দেবীপ্রসাদ দুয়ারী। যাঁরা তাঁকে চেনেন, তাঁরা বলেন উনি নাকি গল্পের ছলে বুঝিয়ে দেন মহাকাশের খুঁটিনাটি। একথা যে ধ্রুব সত্য তা প্রমাণ করলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিজেই। ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স ফেস্টিভ্যালের মুখোমুখি আলোচনায় হাজির সবাইকেই মহাকাশ সফর করালেন তিনি। ফেস টু ফেস উইথ নিউ ফ্রন্টায়ার্স ইন সায়েন্স ইভেন্টে হাজির ছিল বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারাও। তাদের কৌতূহল মিটিয়ে সযত্নে দিলেন সবার প্রশ্নের উত্তরও।

কথাবার্তাতেই বারবার বোঝা যাচ্ছিল চাঁদ-সূর্য-পৃথিবী বলা ভালো গোটা মহাকাশের খুঁটিনাঁটি দেবীপ্রসাদবাবুর প্রায় গুলে খাওয়া। পরিচিত গ্রহ-নক্ষত্রদের সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য দিলেন তিনি। তবে আকর্ষণ অন্য জায়গায়। ভারতের স্পেস প্রোগ্রাম সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য তিনি দিলেন যা শুনে তাক লেগে যাবে আমজনতার।

প্রশ্ন- মহাকাশকে জানতে হলে কী কী করতে হবে? 

উত্তর- একদম প্রাথমিক ভাবে মহাকাশকে খুঁটিয়ে দেখার জন্য প্রয়োজন ভালো টেলিস্কোপের। এছাড়াও নিত্যনতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের মাধ্যমেই মহাকাশ এবং তার সবকিছুকে খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব। 

বিশ্বের বৃহত্তম টেলিস্কোপ টিএমটি (থার্টি মিটার টেলিস্কোপ) বানানো হচ্ছে। শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। অনুমান ২০২০ সালেই লঞ্চ করবে এই টেলিস্কোপ। খুব দেরি হলে ২০২১-এই প্রকাশ্যে আসবে এই টিএমটি। এই টেলিস্কোপ বানানোর কাজে সম্মিলিত রয়েছে ভারত, ইউএসএ, কানাডা এবং জাপান। এর অবস্থান থাকবে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মনা-কিয়া এলাকায়। 

এছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত স্কোয়ার কিলোমিটার অ্যারে (এসকেএ)। দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় তৈরি করা হয়েছে এই টেলিস্কোপ। 

প্রশ্ন- মঙ্গল অভিযান ভারতের স্পেস প্রোগ্রামে কতটা সাফল্য এনেছে?

উত্তর-যখন প্রথমে ভারতের মঙ্গল অভিযানের কথা প্রকাশ্যে আসে সে সময় একটি চিনা সংবাদপত্রে লেখা হয়েছিল আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের জোকার প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে ইসরো। মঙ্গল অভিযান হওয়ার পর ওই একই সংবাদপত্রে লেখা হয়েছিল ইসরো-র সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে স্পেস প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করতে চায় চিন। ২০১২ সালে মঙ্গলযান পাঠানো ভারতের স্পেস প্রোগ্রামের অন্যতম সাফল্য।

প্রশ্ন- সাম্প্রতিক সময়ে ইসরোর চন্দ্রযান-২-এর অভিযান অসফল বলে দাবি করেন অনেকেই। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

উত্তর- ১০ থেকে ১৫ বছর আগেই ভারত বুঝিয়েছিল যে মহাকাশযাত্রা করার মত ক্ষমতা রয়েছে আমাদের দেশের। কে বলেছেন চন্দ্রযান-২ –এর যাত্রা অসফল? ৯৪ শতাংশ সাফল্য পেয়েছে চন্দ্রযান-২। হয়ত আর কদিন পরেই ইসরো বেশকিছু ছবি প্রকাশ্যে আনবে। চাঁদের অমন রূপ দেখে মুগ্ধ হবেন মানুষ, একথা হলফ করে বলা যায়। 

প্রশ্ন- মঙ্গলযান এবং চন্দ্রযান, দু’ক্ষেত্রেই পৃথিবীর বাইরে প্রদক্ষিণের পর লক্ষ্যে পাঠানো হয়েছে মহাকাশযান। এই মেকানিজমের কারণ কী?

উত্তর- জিএসএলভি রকেট এবং আমাদের সংগ্রহে থাকা জ্বালানির যা ক্ষমতা তাতে এটাই আদর্শ পদ্ধতি। একবারে চাঁদে বা মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানো ভারতের পক্ষে এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তাই এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। কারণ পৃথিবী থেকে মহাকাশযান যত দূরে যাবে ততই কমবে তাঁর এসকেপ ভেলোসিটি রেট। সেসময় একসঙ্গে প্রচুর জ্বালানির প্রয়োজন হয় না। তাই ধীরে ধীরে লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব। সময় একটু বেশি লাগলেই এই পদ্ধতি অনেক নিরাপদ। আসলে ভারতীয়দের বুদ্ধি অনেক বেশি তাই এমন টেকনিক নিয়েছে ইসরো। 

প্রশ্ন- অ্যাস্ট্রোনমি অন্যান্য অনেক বিষয়ের তুলনায় খুব ইন্টারেস্টিং। ভারতে কোথায় পড়ানো হয় এই বিষয়, এর ভবিষ্যতই বা কী? উত্তর- বিজ্ঞানের অন্যান্য সব শাখার তুলনায় অ্যাস্ট্রোনমি অনেক উদার। রয়েছে অনেক ভাগ। দু’হাত বাড়িয়ে পড়ুয়াদের আহ্বান করতে তৈরি সে। তবে গ্র্যাজুয়েশনের পরে এই সাবজেক্ট পড়তে পারবেন ছাত্রছাত্রীরা। ফিজিক্স, ম্যাথ, কেমিস্ট্রি যেকোনও বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন পড়লেই মাস্টার ডিগ্রিতে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স পড়তে পারবেন পড়ুয়ারা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রছাত্রীরাও বিটেক করার পর বেছে নিতে পারেন এই বিষয়। তবে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বা অ্যাস্ট্রোনমির যেকোনও শাখাতেই পড়াশোনা করতে গেলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। এ জিনিস মোটেও সোজা নয়। পড়ুয়ারা আগ্রহ পাবেন ঠিকই, কিন্তু খাটতে হবে প্রচুর। এই বিষয় পড়তে গেলে পড়াশোনার প্রতি নিষ্ঠা থাকা খুবই প্রয়োজন। শুধু তাই নয় ভবিষ্যতে রিসার্চ করতে গেলে বেশ লড়াই করেই জায়গা করে নিতে হয়। তবে একবার কেউ এই সাবজেক্ট পড়া শুরু করলে আগ্রহ ক্রমশ বাড়বে একথা বলা যায়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *